‘জনতার গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’ শাসক দল তৃণমূলের এই স্লোগান যেন আবার সত্যি হল লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে। বুথ ফেরত সমীক্ষা, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যে করে পুনরায় মমতায় আস্থা রেখেছে বাংলার জনগণ। ৩০ আসনের লক্ষমাত্রা দূরে থাক, বিজেপি তাদের গত ভোটে প্রাপ্ত আসন সংখ্যার কাছাকাছি যেতে পারেনি এই লোকসভা ভোটে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে বাংলায় ২৯ আসনে পেতে চলেছে শাসক দল তৃণমূল। আর ১১ আসন পেতে চলেছে বিজেপি। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে এসেছে ১ আসন। যদিও এই ফলাফল চূড়ান্ত নয়, ১-২ আসন এদিক ওদিক হলেও হতে পারে, কারণ গণনা এখনও সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। তবে মোটামুটি ভাবে একটি ধারণা পাওয়া গিয়েছে।
২৯ আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই অনেক আসনে জয়ীর নাম ঘোষণা করেছে কমিশন। যেমন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল ব্যবধান প্রায় ৭ লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগর পুনরায় বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্র। জয়নগর, মথুরাপুরে কাঙ্খিত জয় পেয়েছে শাসক দল। জয়ী হয়েছেন প্রতিমা মন্ডল এবং বাপি হালদার। যে সন্দেশখালি ইস্যুতে রাজ্য থেকে দেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল বিজেপি, যেখান থেকে রাজ্যে পুনরায় সিঙ্গুরের মতো আন্দোলন গড়ে তোলার হুঙ্কার দিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী সেখানেও আশানরূপ ফল করতে পারেনি পদ্ম শিবির। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে বাজিমাত করতে এখানে গ্রামের মহিলা তথা সন্দেশখালি মহিলাদের প্রতিবাদের অন্যতম প্রধান মুখ রেখা পাত্রকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন ২ লাখের বেশি ভোটে। এমনকি খোদ সন্দেশখালি বিধানসভাতেও জয় পেয়েছে শাসক দল।
কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা দক্ষিণে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। উত্তরবঙ্গেও নিজেদের খাতা খুলেছে শাসক দল। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিদায়ী সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন জগদীশ চন্দ্র বসু। যদিও রাজনীতির কারবারিরা বলেন সেখানে লড়াই ছিল বিজেপির নিশীথ বনাম রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহের। বাঁকুড়াতে বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারকে হার স্বীকার করতে হয়েছে তৃণমূলের অপরূপ পোদ্দারের কাছে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ভাবে জয় এসেছে বহরমপুরে। ২৫ বছরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে অধীর জমানার অবসান ঘটিয়েছে তৃণমূল। সেখানে প্রার্থী করা হয়েছিল প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে। বর্ধমান-দুর্গাপুরে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন বিশ্বকাপ জয়ী আরেক প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।
কেষ্টহীন বীরভূমের মাটিতেও নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে তৃণমূল। বীরভূম এবং বোলপুর দুই লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন যথাক্রমে শতাব্দী রায় এবং অসিতকুমার মাল। হুগলী কেন্দ্রে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে শুভেন্দু গড়ে দুই আসন জিতেছে বিজেপি। তমলুকে তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্যকে পরাজিত করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কাঁথিতে জয় পেয়েছেন শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। দার্জিলিং কেন্দ্রে জয় ধরে রেখেছেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। বালুরঘাট কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
আবার বাম-কংগ্রেস জোট সকাল বেলা গণনা শুরুর সময় ২-৩ আসনে এগিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিছিয়ে পড়েন তারা। একমাত্র গণি গড় মালদা দক্ষিণে জয় পেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা গণি খান চৌধুরীর ভাইপো ঈশা খান চৌধুরী।