T20 World Cup: জিতলেন, জেতালেন! কাঁদলেন, কাঁদালেন! অতঃপর টি২০ ক্রিকেট থেকে রাজার মতো বিদায় নিলেন ‘রোকো’ জুটি
এ যেন দুই রাজার আখ্যান। তাঁরা খেললেন, জিতলেন, কাঁদলেন, কাঁদালেন অতঃপর পরবর্তী প্রজন্মের হাতে রাজ্যভার তুলে দিয়ে সত্যিকারের রাজার মতো বিদায় নিলেন। তাঁরা হলেন বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটের দুই ব্যাটিং স্তম্ভ রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বিরাট কোহলি জানান, এটিই দেশের হয়ে তাঁর শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। তিনি বলেন, ‘এটাই ভারতীয় দলের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। আমরা বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। জোর করে কোনও পরিস্থিতি তৈরি করার থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। সবাই জানত এর পরে কী হতে চলেছে। এটাই সময় নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার। অসাধারণ সব ক্রিকেটার রয়েছে দলে। ওরাই দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দলকে আরও উঁচুতে তুলবে।’ সেই ঘোষণার ১২০ মিনিট পরে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর ঘোষণা করে দিলেন রোহিত শর্মাও।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে রোহিত বলেন, ‘এটাই ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। এর পরে আমি আর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলব না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এর থেকে ভাল মুহূর্ত হতে পারে না। এই ফরম্যাটেই ভারতীয় দলে আমার অভিষেক হয়েছিল।’ টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও অবশ্য ৫০ ওভার ও টেস্ট ক্রিকেট তিনি খেলবেন বলে জানিয়েছেন রোহিত।
রোহিতও জানতেন, এটাই তাঁর শেষ সুযোগ। সেই কারণে, ট্রফি জিততে এতটা মরিয়া ছিলেন তিনি। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘যে দিন থেকে টি-টোয়েন্টি খেলেছি, উপভোগ করেছি। আমি বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে জিততে পেরেছি তার জন্য খুশি।’
২০০৭ সালের পর আবার ২০২৪। ১৭ বছরের অপেক্ষার পরে জয় এসেছে। মাঝে শেষ কয়েক বছরে বিরাট, রোহিত থেকে ধোনি সবার নেতৃত্বে একাধিকবার প্লে অফ থেকে ফাইনাল খেলেছে ভারত। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এ বার সেই খড়া কাটল।
এই বিদায় যেন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে। ঠিক যেমন প্রস্থান এক বড় মাপের খেলোয়াড়ের হওয়া উচিত, যেমন বিদায়ের স্বপ্ন দেখে প্রত্যেক খেলোয়ার ঠিক তেমন। নিজেদের জীবনে যেন এক বৃত্ত সম্পন্ন করল বিরাট-রোহিত জুটি।
৬ মাস আগেই আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। আর তার ৬ মাস পরে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টি২০ টুর্নামেন্টে রোহিতের অধিনায়কত্বে অপরাজিত থেকে বিশ্বজয়ী ভারত। এর থেকে ভাল রূপকথার গল্প বোধহয় আর হয় না। মাঝে এক সময় বিরাট-রোহিতের দ্বন্দ্বে উত্তাল হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট মহল। কিন্ত সেই সময় কাটিয়ে দুজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জার্সি গায়ে লড়াই করেছে তাঁরা। ম্যাচের শেষে অবলীলায় দলের অধিনায়ককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতেও দেখা গেল বিরাটকে। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে একটা বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি। রোহিতের মতো ক্রিকেটারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ৯টা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। আমার সেখানে ছ’টা। রোহিত এই ট্রফির যোগ্য।’
আবার এই বারে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ফর্মে ছিলেন না বিরাট। দলের স্বার্থে নিজের পছন্দের ৩ নম্বর জায়গা ছেড়ে রোহিতের সঙ্গে ওপেন করেছেন তিনি। সেমিফাইনাল অবধি একটি ম্যাচেও বলার মতো রান পাননি তিনি। গোটা টুর্নামেন্টের সব ম্যাচ মিলিয়ে তাঁর রান ছিল মোটে ৭৫। কিন্তু তবু নিজের সব চেয়ে দামী এবং অভিজ্ঞ ঘোড়ার উপর থেকে বিশ্বাস হারাননি রোহিত। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের কঠিন সময়ে পারফর্ম করেছেন। এমনকি সেমিফাইনালে বিরাট সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রোহিত বলেছিলেন, ‘ও ফাইনালের জন্য নিজের সেরাটা বাঁচিয়ে রেখেছে’। আর অধিনায়কের সেই বিশ্বাস সত্যি হল। চাপের মুখে ৫৯ বলে ৭৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দিলেন বিরাট। প্রত্যয়ের সঙ্গে ফিরে এলেন তিনি। এই জয় যে কেবল ভারতীয় ক্রিকেট দলের নয় বরং গোটা ভারতবর্ষের তা বলাইবাহুল্য।