সন্দেশখালিতে স্টিং অপারেশন, ধর্ষণের সব অভিযোগ ‘সাজানো’, স্বীকার করলেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি

0 35

সন্দেশখালি কান্ডে নয়া মোড়। গোপন ক্যামেরায় করা একটি ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ধর্ষণের সব অভিযোগ মিথ্যে বলে ভিডিয়োতে জানিয়েছেন সন্দেশখালির বিজেপি নেতা। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি
NKTV বাংলা।

ঐ ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তি স্বীকার করে নিচ্ছেন, ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন অভিযোগ আসলে সাজানো হয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে ঐ ব্যাক্তি সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল।
সন্দেশখালিতে গোপন ক্যামেরা অভিযানের মাধ্যমে এই ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, সেই গঙ্গাধরের বাড়ি সন্দেশখালির সিংপাড়া এলাকায়। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তিনি মণ্ডল সভাপতি নন। কেবল তাঁদের দলের সমর্থক। তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন বলেও দাবি করেছেন বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিবেক রায়। তিনি বলেন, ‘এর আগেও ওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। বছর খানেক আগে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের লোকজনের হাতে মারধরও খায়।’
ভাইরাল সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, গঙ্গাধর একটি ঘরে চেয়ারে বসে আছেন। কোনও ব্যাক্তির সঙ্গে তিনি সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে আড্ডার ছলে কথা বলছেন। সেখানেই বার বার উঠে এসেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নাম। গঙ্গাধর বলছেন, ‘এই আন্দোলন এত দিন টিকে আছে কেন? তিনটে ছেলে এ দিক-ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুভেন্দু টাকা এবং মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছেন। এই ধরনের কাজ খালি হাতে হয় না।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রশ্নকর্তা গঙ্গাধরকে বলছেন, ‘দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয় নাই, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ। তোমার বাড়ির বউকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না।’ তাতেই হাসতে দেখা যায় গঙ্গাধরকে।
আবার ঐ ব্যাক্তি প্রশ্ন করেন, ‘কী ভাবে ওদের ব্রেনওয়াশ’ করালেন?’

উত্তরে গঙ্গাধর বলেন, ‘শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোককে গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।’

ভিডিয়োতে গঙ্গাধরকে শুভঙ্কর গিরি বলে একজনের উল্লেখ করেছেন। শুভঙ্করই গ্রামবাসীদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করেছিলেন বলে জানান গঙ্গাধর। তিনি বলেন, ‘শুভঙ্কর ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু টাকার গোলমালের জন্য ও পরে হঠে গেল।’ শুভেন্দুর পিএ বা সহকারি পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন গঙ্গাধর।

মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ লেখাতে কী ভাবে রাজি হলেন মহিলারা? এই প্রশ্ন করতে গঙ্গাধর বলেন, ‘আমরা যা বলেছি, ওরা শুনেছে। কেউ না করেনি। ওদের বলেছিলাম, যদি আপনারা অভিযোগ না লেখান, তা হলে আপনাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। এখানে আপনাদের টিকতেও দেবে না।’
রেখা প্রথমে অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান গঙ্গাধর। অভিযোগ করার জন্য রেখা ২০০০টাকা নিয়েছিলেন। পরে তাঁকে দেখে বাকিরাও সাহস পান।
সন্দেশখালি কান্ডে আরেক অভিযোগকারিনী জবারানী সিংহ বলেন ‘আমাকে দিয়ে অন্ধকারে অভিযোগ পত্রে সই করানো হয়েছিল। আমি কিছুই জানি না।’
ভিডিয়োয় গঙ্গাধরের দাবি তিনি এবং শান্তনু নামে এক জন মিলে সন্দেশখালির সম্পূর্ণ আন্দোলন ধরে রেখেছেন। ভিডিয়োটি ঘিরে ইতিমধ্যে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপিকে তুলোধনা আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর যাচাই না করে ‘বাংলাকে কলুষিত’ করার জন্য তোপ দেগেছেন সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধেও। তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন ‘আমি তো আগেই বলেছিলাম সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.