কথা না শোনায় মা বকেছিল। মায়ের বকা খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল বছর দশেকের মাফুজ। বাচ্চা মন মহফুজের, তখন সে ভাবতেও পারে নি যে তার সাথে কি ঘটতে চলেছে। মহফুজের সরল মন তাকে একটি বারের জন্যও এটা মনে করায় নি যে বাইরের পৃথিবীটা কত কঠিন।
বিহারের কিষানগঞ্জ থেকে ট্রেনে চেপে কোনওভাবে সে চলে আসে শিয়ালদহে। প্রবল খিদেতে ট্রেনের কামরায় কাঁদছিল মাফুজ। তখনই এক হকারের চোখে পরে মাফুজ। বাচ্চা ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখে হকারের মায়া হয়। হকার আজিজুল তার হরিনারায়ণপুরের বাড়িতে নিয়ে যান মাফুজকে। সেখানেই নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মাফুজকেও মানুষ করতে শুরু করেন এবং দিন দিন মাফুজ এক গরিব হকারের বাড়িতে মানুষ হতে থাকে। সেই দিন নিজের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় কিছুই বলতে পারেনি মাফুজ। তবে সমের সাথে সাথে সে সেই পরিবারের একাংশ হয়ে ওঠে। আজিজুলের তার আর সব ছেলেমেয়েদের মতই সমান আদরে মানুষ করছিল মাফুজকে। মাফুজও বাবা বলে মেনে নেয় আজিজুলকে।
এভাবেই ১০ টা বছর কেটে যায়। সুখেই কাটছিল আজিজুলের পরিবার,তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট আজিজুলের পরিবারে বান ড়েকে আনে। ১০ বছরে বালক এখন তরুণ। মাফুজও আর সবার মত সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করে। এবং নিজের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার ফলে মাফুজের জীবনে আসে নতুন মোড়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা সেই ছবি হাতে পরে বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ আবুলের। বাবা সন্ধান পায় তার দশ বছেরের হাড়িয়ে যাওয়া সন্তানের।এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই যোগাযোগ করেন বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ আবুল। দাবি করেন, মাফুজ তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলে।
এবার মাফুজ তো তার হারিয়ে ফেলা মা বাবাকে ফিরে পেল, তবে নিজের বাবা-মাকে ফিরে পাওয়া খুশিতে খুশি হলেও পালক বাবা আজিজুলকেও হারাতে চায় না মাফুজ। দীর্ঘদিনের মায়া কাটিনো সহজ নয়,তবুও তার পালিত মা-বাবাকে ত্যাগ দিতে হল মাফুজকে।
কিষানগঞ্জে আবুলের পরিবারে যখন খুশির হাওয়া বইছে তখন জয়নগর থানার হরিনারায়ণপুর গ্রামে আজিজুলের বাড়িতে চরম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। প্রায় এক যুগ ধরে নিজেরে সন্তানদের সঙ্গে পিতৃস্নেহে মাফুজকে মানুষ করেছিলেন আজিজুল। তাই মাফুজকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে গিয়ে কান্নায় গলা বুজে আসছে আজিজুল ও তাঁর স্ত্রীর। তবে মাফুজ তার প্রকৃত মা-বাবার কোলে ফিরে যাওয়ায় খুশি ট্রেনের ফেরিওয়ালা।