নজরে কোচবিহার! প্রথম দফায় কেন সব থেকে বেশি হাইভোল্টেজ এই কেন্দ্র?
১৯ এপ্রিল শুরু প্রথম দফার লোকসভা ভোট। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। তার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়িয়ে ফেলার ভাবনা নির্বাচন কমিশনের। বাংলায় প্রথম দফা ভোটেই থাকবে ২৭৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার মধ্যে আবার ১১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীই মোতায়েন করা হয়েছে কোচবিহারে।
প্রথম দফা ভোটে যে সব চেয়ে বেশি হাই ভোল্টেজ কেন্দ্র কোচবিহার তা মেনে নিয়েছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ভোটের আগেই দফায় দফায় বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এবং রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে এই কেন্দ্র। এমনকি কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে একে অপরের দিকে তেড়ে যেতেও দেখেছে কোচবিহারের আমজনতা।
২০১৯ লোকসভায় তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পরেই তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তখন তিনি তরুণ মুখ, তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা প্রবল। আবার রাজবংশী মুখ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছিলেন নিশীথ। সেই বার বিজেপির নিশীথের কাছে প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে হারতে হয়েছিল তৃণমূলের পরেশ চন্দ্র অধিকারীকে। সেই ভোটে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১,৮১৪,২০০। তার মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন ১,৫২৪, ৬৮৩। যার মধ্যে নিশীথ প্রামাণিক পেয়েছিলেন ৭,৩১,৫৯৪ ভোট, আর তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছিল ৬,৭৭,৩৬৩ ভোট।
তারপর অবশ্য অনেক জল গড়িয়েছে তোর্সার পাড় দিয়ে। কেবল তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষ নয় এ রাজ্যের শাসক দলকে বিড়াম্বনায় ফেলেছে দলীয় গোষ্ঠী দন্ড। যা সামলাতে খোদ সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছুটে আসতে হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। এই বারে তৃণমূলের প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। তিনিও রাজবংশী মুখ। এ ছাড়াও ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা নীতিশ চন্দ্র রায় লড়ছেন ভোটে। আবার কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন পিয়া রায়চৌধুরী।
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, নাটাবাড়ি, মাথাভাঙা, শীতলখুচি, দিনহাটা এবং সিতাই। এগুলির মধ্যে কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, নাটাবাড়ি, মাথাভাঙা, শীতলখুচি বিজেপির দখলে। আবার দিনহাটা ও সিতাই তৃণমূলের হাতে। জেলায় পঞ্চায়েতের তিন স্তরেও তৃণমূলই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এদিকে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশ চন্দ্র রায়। এলাকার বহু দিনের পুরনো নেতা। নিজস্ব একটি জন সমর্থন রয়েছে । ১৯৭৭ থেকে দীর্ঘ ৩৭ বছরে এই কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীরা। ২০০৯ সালে শেষ এই আসনে জয় পেয়েছিল বামেরা। সাংসদ হয়েছিলেন নৃপেন্দ্র নাথ রায়। তখন অবশ্য বাম আমল। তাই রাজনৈতিক মহলের একাংশের বার দাবি এই কোচবিহার কেন্দ্রে এ বার আর লড়াই দ্বিমুখী নয়, বরং তা ত্রিমুখী।
তারপর ২০১৪ সালে ভোটে জিতে সাংসদে যান তৃণমূলের রেণুকা সিংহ। তারপর ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হন পার্থ প্রতিম রায়। তখনও অবধি এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে ছিল। এরপর ২০১৯ সালে লোকসভা কেন্দ্রে রাজ্যের শাসকদলের হাতছাড়া হয় এই কেন্দ্র। তারপর থেকেই বার বার রক্ত ঝড়ছে কোচবিহারে। বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আতঙ্ক এখনও কাটেনি কোচবিহার বাসীর মন থেকে। শীতলকুচি তো আছেই। ফলমারিতে বুথের মধ্যে বিজেপির এক এজেন্ট কে হত্যা করা হয়েছিল। এখনও নাকি রাত হলেও শোনা যায় গোলাগুলি আর বাইক বাহিনীর দাপট।
ক্ষোভ আরও নানা বিষয় নিয়ে। কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনে মেলেনি একশো দিনের টাকা থেকে আবাস যোজনা কোনও কিছুর টাকাই। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বাজেট ঘোষণার সময় কল্পতরু হয়ে বলেছেন কেন্দ্রের আটকে রাখা সেই সব টাকাই দিয়ে দেবে রাজ্য সরকার।
তবে জয় নিয়ে যেন একপ্রকার নিশ্চিত নিশীথের দাবি তাঁর জয় নিশ্চিত, আবার তৃণমূলের চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া দাবি এবারে তৃণমূলকে আটকানো অসম্ভব। তবে এইন কেন্দ্র থেকে দিল্লি কে যাবেন তা অবশ্য সময় বলবে। এখন কোচবিহারবাসির আশা এ বার শান্তি ফিরলেই ভাল।