ভোটের আগে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে। বৃহস্পতিবারই রাজ্যের শিক্ষমন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অপসারণ সুপারিশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অভিযোগ এনে শুক্রবার আরও এক কদম এগিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। পাল্টা, রাজ্যপালকে ৯ পাতার চিঠিতে উত্তর দিয়ে এক্তিয়ার বোঝাল রাজ্য। রাজ্যপালের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। সেদিন, রাজ্ভবন থেকে একটি রিপোর্ট কার্ড প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট কার্ডের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রাজভবনের বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের নির্দেশ স্মরণ করিয়েও আচার্যের ‘ক্ষমতা’ স্মরণ করানো হয়।
এরপর বৃহস্পতিবারই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসুকে অপসারণের সুপারিশ করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। নির্বাচনবিধি ভঙ্গ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে পোস্ট করেন ব্রাত্য। পরপর দুটি পোস্টে ব্রাত্য় লেখেন, রাজ্যপাল যদি আমার পদ অপসারণের দাবি তোলেন তবে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে আমিও তাঁর পদ অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। আমি যদি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে থাকি, তবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করাই সমীচীন। কোনও মন্ত্রীর অপসারণের সুপারিশ করতে পারেন কেবল মুখ্যমন্ত্রীই। রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন।
এরপরই শুক্রবার রাজভবনের প্রকাশিত রিপোর্ট কার্ডের জবাব দিয়ে একটি ৯ পাতার চিঠি পাঠায় রাজ্য। সেই চিঠিতে তাঁকে সাংবিধানিক এক্তিয়ার স্মরণ করিয়ে রাজ্য সরকারের বিবৃতি ‘আচার্য তথা রাজ্যপাল বিধিবহির্ভূতভাবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। পড়ুয়াদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’
ঠিক এরপরই আরও এককদম এগিয়ে ক্যাম্পাসে দুর্নীতি, হিংসা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খতিয়ান জানতে বিচারবিভাগীয়. তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। জানান, সেই বিশেষ কমিশন গঠন করে তদন্তের কথাও। সেই কমিটির মাথায় থাকবেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। পাল্টা টুইট করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই টুইটেও রাজ্যপাল হওয়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হয়ে তিনি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শুক্রবারই বিকেলে এনকেটিভি বাংলায় এক্সক্লুসিভ প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্যপাল। জানান, তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা বজায় রেখেই তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্যপালের আরও দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অপসারণ বা নিয়োগ করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই।
সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভায় সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ঘটনাচক্রে, সেই সভার পরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে অপসারিত হন রজতকিশোর। সেইদিনই একটি অ্যাডভাইজারি জারি করে রাজ্য। সেই অ্যাডভাইজারির উল্লেখ করে বুধবার রিপোর্ট কার্ড পেশ করে রাজভবন। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত নতুন নয়। নির্বাচনী আবহে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এখন যেন অনুঘোটক।