সঞ্জয় লীলা বনসালি বলিউডে এই নাম জানেন না এমন মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে তাঁর নির্দেশিত ‘হীরামান্ডি: দ্য ডায়মন্ড বাজার’ ওয়েব সিরিজ। অতি অল্প সময়ে দর্শকদের ভালবাসা পেয়েছে সঞ্জয় লীলা বনসালির প্রথম ওয়েব সিরিজ। তবে শুধু চলচ্চিত্র পরিচালনা নয়, বলি নির্দেশকের আরেকটি বড় গুণ হল সঙ্গীত নির্মাণ।
‘দেবদাস’, ‘গোলিও কি রাসলীলা রামলীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’র মতো একাধিক সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গেই সঙ্গীত নির্মাণের কাজ করেছেন সঞ্জয়। কিন্তু তবু তাঁর জীবনের একটি বড় আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। তাও আবার সেই সঙ্গীত কে ঘিরেই। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই কথাই জানিয়েছেন বলি পরিচালক।
সঞ্জয় জানান সিনেমার প্রতি, শিল্পের প্রতি তাঁর ভালবাসার কারণ সঞ্জয়ের বাবা নবীন বনসালি। সঞ্জয় লীলা বনসালির বাবা নবীন বনসালি ছিলেন একজন ব্যর্থ প্রযোজক। যিনি কখনও সাফল্য পাননি। তার শেষ ছবি জাহাজী লুটেরা বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। সঞ্জয় জানান তাঁর বাবা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তিনি একটি অদ্ভুত অনুরোধ করেছিলেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট গান শোনার জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলেন। গানটি হল পাকিস্তানি শিল্পী রেশমার গাওয়া ‘হায়ো রাব্বা’। রেশমা তার অপরিণত, অপ্রশিক্ষিত’ কন্ঠস্বরের জন্য পরিচিত ছিলেন। দেশ ভাগের সময়, রেশমা পাকিস্তানে থেকে যান। ঘটনাচক্রে বনসালি পরিবারের শিকড় সেখানেই।
গানটির কেন নবীনের এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? সঞ্জয়ের অনুমান সম্ভবত তাঁর শেষ মুহুর্তে, বাবা নিজের শিকড়ের সাথে একটি সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। যে জমি তাঁর পূর্বপুরুষদের তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার যে কষ্ট তা থেকেই মৃত্যুর আগে মুক্তি চেয়েছিলেন তাঁর বাবা।
পরিচালক জানান তরুণ সঞ্জয়, তাঁর বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে সেই গানের ক্যাসেটটি খুঁজতে চলে যায়। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন তাঁর বাবা কোমায় চলে গিয়েছিলেন। অসহায় এক তরুণ ছেলের কাছে তখন সেই সামান্য ক্যাসেটটি স্ব থেকে ভারী হয়ে উঠেছিল। আর সঞ্জয়ের মা মরিয়া হয়ে সঞ্জয়কে সেই ক্যাসেটটি বাজানোর কথা বলছিলেন।
বনসালি বলেন, ‘জীবন খুবই আকর্ষণীয়। সিনেমা কি কখনও এই আবেগকে তুলে ধরতে পারে?’ এই প্রশ্নই তার শৈল্পিক সাধনার সারমর্মকে বয়ে নিয়ে চলে। আসলে সঞ্জয়ের সব সিনেমাই সে মানবিক জীবনের অভিজ্ঞতার জটিলতাগুলিকে তুলে ধরতে চান। যার মধ্যে কিছু আবেগ থাকে যা গানের মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলতে পারেন।