গত কালে রাজ্যে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পূর্বে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাত্রি বাস করেন রাজভবনে। তারপর আজ সকাল থেকেই জনসভা বাংলার নানা প্রান্তে। ৩ দফা ভোটের আগে আক্রমণ বিরোধী দলগুলিকে। বাংলার মঞ্চ থেকেই রাহুল গান্ধীকেও বিঁধতে ভোলেননি নমো।
তিনি বলেন, ‘আমি আরাম করার জন্য জন্মায়নি। আমি আপনাদের জন্য সেবায় ব্রতী। মোদীর একটাই স্বপ্ন। আপনাদের স্বপ্নকে পূরণ করার স্বপ্ন আমার।’
এ দিন আবারও বিকশিত, আত্মনির্ভর ভারতের পক্ষে সওয়াল করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘মেরা ভারত মেরা পরিবার। বিকশিত ভারত, আত্মনির্ভর ভারত তৈরির জন্য কাজ করছি। এটা আমার জন্য নয়, আপনাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বেঁচে আছি। যখন দারিদ্র দেখি, তখন আমার কাজ আরও বেড়ে যায়। কারণ সে সময় আমার ছেলেবেলা মনে পড়ে যায়। আমার ভারত আমার পরিবার দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। আমার বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে, গত ৫ বছরে ২৫ লক্ষ মানুষের যদি দারিদ্র মুক্তি পায়। তাহলে আগামী দিনে সবার দারিদ্র মুক্তি পেতে পারে।
এরপরেই এক যোগে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীদের। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেরা মোদীকে মাথায় লাঠি মারতে বলছে। কিন্তু আমি ভয় পাই না, আমি গরিবের ছেলে। তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেরা একটা রাজ্যকে কীভাবে শেষ করে, তা আপনারা দেখেছেন। ত্রিপুরাকে শেষ করে দিয়েছিল বামেরা, কিন্তু বিজেপি সরকার সেখানে উন্নয়ন করেছে।’
নিয়ম করে হিন্দু অস্ত্রে শান দিতে ভোলেননি মোদী। বর্ধমানের সভা থেকে নমো বলেন, ‘আমি কাল টিভিতে দেখছিলাম, একজন তৃণমূল নেতা হুমকি দিচ্ছিল। বলছিল, হিন্দুদের ভাগীরথিতে ভাসিয়ে দেবে। বাংলায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। ওঁদের রামমন্দিরে আপত্তি, রাম নবমীর শোভাযাত্রায় আপত্তি।’
সন্দেশখালি ইস্যুতেও রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্দেশখালিতে তৃণমূল যা করেছে সবাই জানেন। সন্দেশখালিলে কী হয়েছে, গোটা দেশ জানে। সন্দেশখালির মহিলারা একটা গান গেয়েছেন। আমি চোখের জল আটকাতে পারিনি। আমি সকলকে বলছি এই গান শুনুন। সন্দেশখালিতে অপরাধীদের বাঁচাচ্ছেন মমতা।’ সন্দেশখালিতে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্দেশখালিতে বোমা-বারুদ-অস্ত্র উদ্ধার। গণতন্ত্রকে মজবুত করতেই কি অস্ত্র মজুত?’
এদিন খুব তাৎপর্য পূর্ণ ভাবেই বিরোধীদের সঙ্গে ‘জিহাদ’ শব্দটিকে জূড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল তুষ্টিকরণের সঙ্গে আছে। ইন্ডি জোট ভোটের জন্য যা খুশি করতে পারেন। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্ক মানবতার থেকে বড়। তোষণ কী ধর্মের থেকে বড়। দেশ ও সমাজের বিভাজন করে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল। ভোট জিহাদের খেলা খেলছে বিরোধীরা। ভোট জিহাদ নিয়ে চুপ কংগ্রেস-তৃণমূল। কংগ্রেস চায় জেহাদি ভোটব্যাঙ্ক এক করতে। দলিত, আদিবাসীদের পিছিয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। কারণ দলিত আদিবাসীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কংগ্রেস চায় ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ। কর্নাটকে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করেছে।’
রায়বেরিলি থেকে দাঁড়ানো নিয়ে রাহুলকে কটাক্ষ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘ভয় পেয়ে ২ জায়গা থেকে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের শাহজাদা। আগে দাঁড়িয়েছিল আমেঠিতে, এবার লড়ছে রায়বেরিলি থেকে। কংগ্রেস এবার কম সিটে লড়ছে। দেশও বুঝে গিয়েছে, ভোট জিততে লড়াই করছে না কংগ্রেস। ইন্ডি জোট একটা ভোট ব্যাঙ্কের জন্য কাজ করছে।’
এনডিএ জোটের ৪০০ পারের লক্ষ্যে অবিচল মোদীর বাণি, ‘গোটা দেশে চেষ্টা করেও কংগ্রেস হাফ সেঞ্চুরি করতে পারবে না। তৃণমূল গোটা দেশে ১৫ আসনও পাবে না। এখন চর্চা শুধু এনডিএ-র ৪০০ পার করা নিয়ে।’
তেহট্টের সভা থেকে মতুয়া ভোট টানতে বার্তা মোদীর। মতুয়াদের ন্যায় দিতেই সিএএ লাগু করা হয়েছে বলে দাবি নমোর।তিনি বলেন, ‘ সিএএ নিয়ে মিথ্যে বলছে তৃণমূল। তৃণমূলের কাছে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিটাই মূল। তৃণমূল সিএএ আটকাতে পারবে না।’
দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে তোপ দেগে মোদীর গ্যারান্টি, ‘তৃণমূলের সব লুঠের হিসেব দিতে হবে। যাঁরা লুঠ করেছে সবার হিসেব হবে। যাঁদের সঙ্গে দুর্নীতি হয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরানো হবে। প্রতারিত টাকা ফেরতের গ্যারান্টি মোদীর।’