সরকারকে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মাওবাদীদের

9

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৯ এপ্রিল: গত কয়েক মাসে একের পর এক শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারের মৃত্যুতে কার্যত ভেঙে পড়েছে মাওবাদী সংগঠনগুলির ভিত। বহু মাওবাদী প্রাণের ঝুঁকি এড়াতে ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এবার সরকারের কাছে এক মাসের যুদ্ধবিরতির আবেদন জানাল মাওবাদীরা।

১৭ এপ্রিল মাওবাদীদের উত্তর-পশ্চিম সাব-জোনাল ব্যুরোর তরফে প্রকাশিত এক লিখিত বার্তায় এই প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শান্তি আলোচনার পথ প্রশস্ত করতেই এই যুদ্ধ বিরতির আর্জি জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৮ এপ্রিল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রথম চিঠি প্রকাশ করেছিল মাওবাদীরা। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় চিঠিতে আরও স্পষ্টভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে তারা। সেখানে মাওবাদীদের তরফে বলা হয়েছে, অভিযানের নামে যেসব হত্যাকাণ্ড চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। প্রকৃত সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, আর তা সম্ভব একমাত্র শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আমাদের কোনও রণনৈতিক পদক্ষেপ নয়। বরং, দুই পক্ষ যদি সত্যিই আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে এমন একটি যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শান্তিপূর্ণ আলোচনার পক্ষে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যেই এই আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।

যুদ্ধবিরতির আর্জি জানিয়ে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে মাওবাদীদের প্রথম চিঠির পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল মাওবাদীরা যদি সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে সরকারও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। সেই প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় চিঠিতে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে মাওবাদীরা।

তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়ায় বিভিন্ন জোনাল কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপত্তাবাহিনীর লাগাতার অভিযানে বহু মাওবাদী নেতা প্রাণ হারাচ্ছেন, ফলে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। সেই কারণেই এক মাসের যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আলোচনার পথে এগোনো সম্ভব হয়।

মাওবাদীদের তরফে মানবাধিকার সংগঠনগুলিকেও এই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে শান্তি আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়।

প্রসঙ্গত ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাওবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। ২০২৪ সালে শুধু বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদী। গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারেরও বেশি, আর আত্মসমর্পণ করেছে ৮৩৭ জন মাওবাদী।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই মৃত্যু হয়েছে আরও ১৩০ জন মাওবাদীর। এরমধ্যে শুধুমাত্র বস্তার রেঞ্জেই নিহত হয়েছে ১১০ জন। নিহতদের মধ্যে বহু শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী কমান্ডার রয়েছেন, যাঁদের মাথার দাম ঘোষণা করা ছিল। এই লাগাতার অভিযানে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি একের পর এক ভেঙে পড়ছে। এক সময় মাও অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত বড়েশেট্টি গ্রাম এখন সরকারিভাবে মাওবাদী-মুক্ত বলে ঘোষিত হয়েছে। মাও-আধিপত্যের জেলাও কমে ১২ থেকে দাঁড়িয়েছে ৬-এ।

Comments are closed.