Loksabha Election 2024: সম্মুখসমরে প্রাক্তন শ্বশুড়-জামাই, জিতবে কে? চাবিকাঠি রয়েছে বামের হাতেই, নজরে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র

0 51

শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র। অথবা তৃণমূলের গড় বললেও খুব একটা ভুল হবে না। সেই ২০০৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী উকিল বাবু, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন বার এই কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদে গিয়েছেন তিনি। এই বার চতুর্থবারের জন্য দৌড়ে নেমেছেন। সংসদ থেকে রাজ্য রাজনীতি সব জায়গায় নিজের বক্তব্যের জেরে সবসময় খবরে থাকেন তিনি। কখনও উপরাষ্ট্রপতিকে ব্যাঙ্গ করেন তো কখনও আবার নিজের দলের বিধায়ককেই প্রচারের মাঝে নামিয়ে দেন গাড়ি থেকে। অবশ্য এই সব কিছুর বিপরীতে তাঁর ব্যখ্যা ‘আমি এরকমই, শ্রীরামপুরের মানুষ আমাকে এই ভাবেই চেনেন’। চতুর্থবারের জয় নিয়েও আশাবাদী তিনি, দাবি দেড় লক্ষের বেশি ব্যবধানে জিতবেন তিনি।

তবে আদপেই কী তাই? সত্যিই কি চতুর্থবারেও জয় এতটা সহজ হবে কল্যাণের জন্য? কী বলছে শ্রীরামপুরের ভোটের অঙ্ক?

এই লোকসভার একটা বিশেষ নজির রয়েছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় এর আগে এই লোকসভায় পর পর তিনবার সাংসদ হওয়ার নজির রয়েছে মাত্র একজনের, তিনি হলেন সিপিএমের দীনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তা ছাড়া টানা ৩ বার আর কেউ জয় পাননি। এমনকি কোনও রাজনৈতিক দলের কাছেও ক্ষমতা ছিল না। বরং একবার বাম একবার কংগ্রেস এইভাবেই চলত। প্রথম ঘাসফুল ফোটে ১৯৯৮ সালে। তবে ২০০৪ সালে পুনরায় দখল নেয় বামেরা। তারপর ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিজের সাংসদ বলে বেছে নিয়েছেন শ্রীরামপুরের জনগণ।

গত লোকসভা ভোটের অঙ্কের দিকে তাকালে মনে হবে এই আসনে লড়াই বিজেপি-তৃণমূলের। কারণ ২০১৯ সালে লোকসভায় বিজেপির মোট ভোট ছিল ৩৯.০৪%। অন্যদিকে কল্যাণের ঝুলিতে ছিল ৪৬.১৭% ভোট। এই বারে বিজেপির প্রার্থী তরুণ নেতা কবীরশঙ্কর বসু। তবে তিনি কেবল বিজেপি প্রার্থী নয়, তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে তা হল ঘটনাচক্রে তিনি আবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরই প্রাক্তন জামাই বটে। আর তাই ভোটের ময়দানেও সেই নিয়ে খোটা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। নিজের প্রচারে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বলেন ‘কে চেনে ওকে! আমার পরিচয়েই তো শ্রীরামপুরে ওর পরিচয়। ওর বাবাকেও কি কেউ চেনে এখানে?’ যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বিজেপি প্রার্থীর দাবি কল্যাণ বাবু চিরকাল ব্যাক্তিগত আক্রমণ করেন, মানুষ ভোট বাক্সে এর জবাব দেবেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি কালে কালে ভোট বাড়লেও এই কেন্দ্রে বিজেপির সংগঠন এখনও খুব দুর্বল।

অন্যদিকে ভোট কমলেও বেশ জোরদার সংগঠন রয়েছে বামেদের। এই আসনে সিপিএম প্রার্ত্থী এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক তরুণ নেত্রী দীপ্সিতা ধর। জেএনইউ থেকে পড়াশোনা করা দীপ্সিতা তরুণ মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। গত বিধানসভাতেও প্রার্থী ছিলেন বালিতে। আবার দীপ্সিতার দাদু এক সময়ে এই শ্রীরামপুর লোকসভার ডোমজুর বিধানসভার ৩ বারের বিধায়ক। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই আসনে বাম প্রার্থী খুব একটা হালকা নয়। তার প্রমাণ অবশ্য পাওয়া গিয়েছে বার বার কল্যাণের বাম প্রার্থীর সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোয়। যদিও গত লোকসভায় বামেদের ঝুলিতে ছিল প্রায় ১১ শতাংশ ভোট। আর বাম-কংগ্রেস যোগ করলে অঙ্ক হয় ১৩.৩৭%।

 তা ছাড়াও এই আসনে একটা বড় ভোট রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সেই ভোট কার কাছে যায় তার দিকেও তাকিয়ে সব গোষ্ঠীই। কারণ এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে নওশাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফও। আর শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রেই রয়েছে আইএসএফএর জন্মস্থল ফুরফুরা শরিফ।

যদিও গত বিধানসভার ফলের দিকে তাকালে পাল্লা ভারি শাসকদলের। কারণ ৭টি বিধানসভার দখল তাঁদের কাছে। তবে বামেদের দাবি এই বারে তাঁদের ভোট বাড়বে। এমনকি সংখ্যালঘু থেকে তফশিলি ভোট এখন বাম মুখি। তাই যদি সত্যি হয় তা হলে ভোট কাটাকুটিতে চাপে পড়তে পারে শাসক দল। আবার সংখ্যালঘু ভোট নিয়েও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নয় শাসক দল। তাই জয়ের অঙ্ক যে কোনও পক্ষের জন্যই খুব একটা সহজ নয় তা বলাই বাহুল্য। এই ভোটে শ্রীরামপুর কেন্দ্রে একাধিক কারখানা বন্ধকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছে বাম-বিজেপি উভয়পক্ষই। আবার কল্যাণের পালটা হাতিয়ার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ২০০ বছরের পুরনো শ্রীরামপুর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে চান তিনি, ‘ইন্ডিয়া’ সরকার ক্ষমতায় এলে হবে মেডিক্যাল কলেজ দাবি কল্যাণের। তবে কার কথায় মানুষ ভুলবে তার জবাব পাওয়া যাবে ৪জুন।     

Leave A Reply

Your email address will not be published.