Loksabha Election 2024: রাজার জমিতে লড়াই দুই ফুলে, শেষ পর্যন্ত ফুটবে কে, নজরে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র  

0 21

কৃষ্ণনগর মানে জগদ্ধাত্রী পুজো, আর কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা উঠলেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথা তো উঠবেই। যদিও এই নামেই এই বার লোকসভা ভোটে উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। তবে সে সব পরের কথা, আগে বরং দেখা যাক সংসদীয় রাজনীতিতে এই আসনের ইতিহাসের দিকে। ১৯৭১ থেকে ১৯৯৮ টানা আটবার এই আসনে জয়ী হয়েছে বামফ্রন্ট। কৃষ্ণনগর থেকে জিতে টানা চার বার সংসদে গিয়েছেন অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। সেই আসনে প্রথমবার ১৯৯৯ সালে হোঁচট খায় বামেরা। সদ্য জন্মানো তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে পদ্ম ফোটে পলাশীর প্রান্তরে।

কিন্তু সে একবারই। পরের নির্বাচনেই ২০০৪ সালে আবার নিজেদের আসন পুনরুদ্ধার করেন বামেরা। তবে পাশা আবার পালটায়। ২০০৯ সালে এই আসনে তৃণমূলের টিকিটে লড়েন অভিনেতা তথা নেতা তাপস পাল। সেই বার প্রবল মমতা হাওয়ায় সাংসদে যান তাপস পাল। অনেক জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে ২০১৪ সালেও তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী ছিলেন তিনিই। জেতেন বড় ব্যবধানে। তবে তার পরে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জেল এবং ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ মতো বিতর্ক মন্তব্য করায় ২০১৯ সালে আর ভোটে জিতে সাংসদ হওয়ার হ্যাট্রিক করা হয়নি তাপসের।

বরং সেই জায়গায় ছবিতে আসেন এক কালে রাহুলের দলের সম্পদ মহুয়া মৈত্র। ২০০৯ থেকে তৃণমূল দলের সদস্য তিনি। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে লড়ার সুযোগ এলেও তা গ্রহণ করেননি মহুয়া। সেই ত্যাগ যেন আরও বড় উপহার হয়ে ২০১৯ সালে ফিরে আসে মহুয়া মৈত্রের কাছে। কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে দিল্লি যান মহুয়া। তারপরের গল্প সবার জানা। সাংসদে বলিষ্ঠ কন্ঠে মোদী বিরোধীতা থেকে শুরু করে আদানি-আম্বানি প্রসঙ্গে বার বার বিজেপিকে খোঁচা। রয়েছে আরও নানা বিতর্কও। মোটের উপর ৫ বছরের সাংসদ জীবনে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের রাজনীতিতেও জায়গা করে নিয়েছেন মহুয়া মৈত্র। তবু গোপন তথ্য প্রকাশ করা থেকে শুরু করে নানা বিতর্কে জড়ানোয় সবাই মনে করেছিলেন এই ভোটে হয়তো আর টিকিট পাবেন না মহুয়া। কিন্তু শেষ মূহুর্তে যেন সুবিধা করে দিল বিজেপি নিজেই। শালীনতা ইস্যুতে সাংসদ থেকে বহিষ্কার করে দেশীয় রাজনীতিতে আরও একবার খবরের শিরনামে মহুয়া মৈত্র। আর সেই সূত্র ধরেই ২০২৪ লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগরে আবারও তৃণমূলের প্রার্থী তিনিই।

তাঁর লড়াই বিজেপির প্রার্থী রাজমাতা অমৃতা রায়। এখানেই আসে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথা। কারণ বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় আবার বিবাহ সূত্রে কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের পুত্রবধূ। ইতিহাস বলছে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌল্লার বিরুদ্ধে যারা চক্রান্ত করেছিলেন সেই দলে সামিল ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও। তাই একদল সেই আবেগকেই উস্কে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে দাবি করেছেন। পালটা রাজমাতা বলেন হিন্দু ধর্মকে বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। যদিও ভোটের রাজনীতিতে এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে নারাজ দুই পক্ষের দাবি ২০০ বছর আগের অতীত নয় ভোট হওয়া উচিত বর্তমান এবং ভবিষ্যতে কী হবে কী করবে তা নিয়েও!

এই আসনে সংখ্যালঘু বড় ফ্যাক্টর, আর তাই সেই ভোট নিজের খাতায় লেখাতেই কৃষ্ণনগরে কংগ্রেস সমর্থিত জোট প্রার্থী এসএম সাদি। আবার এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ। তাঁদের প্রার্থী আফরোজা খাতুন। তবে শেষ বারের অঙ্ক বলছে এই আসনে আসল লড়াই দুই ফুলের। ২০১৯ সালে তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ৪৫.২৭% ভোট এবং বিজেপির ঝুলিতে ৪০.৬২%। আর অন্য দিকে বাম-কংগ্রেস ভোট মেলালে তা হয় প্রায় ১১%। এখন দেখার কৃষ্ণনগরবাসির মনে জায়গা করে নিতে পারে কে, রানিমা অমৃতা রায় নাকি বহিষ্কৃত লড়াকু সাংসদ মহুয়া মৈত্র।    

Leave A Reply

Your email address will not be published.