শুক্রবার দ্বিতীয় দফার লোকসভা ভোট। তার মধ্যে রয়েছে বাংলার দার্জিলিং- রায়গঞ্জ-বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রও। দ্বিতীয় দফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন গুলির মধ্যে অন্যতম বাংলার দুই কেন্দ্র রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাট। কারণ একটি আসন থেকে জিতে ২০১৯ সালে মোদীর মন্ত্রীসভায় ঠাই পেয়েছিলেন বাংলার সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী এবং আরেকটি আসন থেকে জিতে এখন রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আরেক বিদায়ী সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।
তবে কেমন ছিল ২০১৯ ভোটের অঙ্ক? কোন সমীকরণে বাকিদের মাত করেছিল বিজেপি? দেখে নিন এক ঝলকে
রায়গঞ্জ- Raiganj Loksabha Election 2019
২০১৯ সালে এই আসনে জিতে মোদীর মন্ত্রীসভায় গিয়েছিল বিজেপির সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। তবে তাঁর আগেও এই আসনে বার বার পরিবর্তন দেখেছে বাংলা। ২০১৪ সালে রায়গঞ্জে খুব অল্প ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। তবে দ্বিতীয় কিন্তু তৃণমূল বা বিজেপি ছিল না। ২০১৪ লড়াই হয়েছিল কংগ্রেসের দীপা দাসমুন্সির সঙ্গে। ২০০৯ সালে রায়গঞ্জে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন দীপা। তাঁর আগে দুই লোকসভা নির্বাচনেও এই আসন ছিল কংগ্রেসের দখলেই। সাংসদ হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী। সেই সব অঙ্ক বদলে ২০১৯ সালে প্রথম এবং দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে উঠে আসে তৃণমূল এবং বিজেপি। বিজেপির দেবশ্রীর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করে ইসলামপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে। আর কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন দীপা দাসমুন্সী এবং সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন বিদায়ী সাংসদ মহম্মদ সেলিম। ২০১৯ সালে ৬০,৫৭৪ ভোটের ব্যবধানে কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে পরাজিত করেন বিজেপির দেবশ্রী। বিজেপির প্রাপ্ত মোট ভোট ছিল ৫,১১,৬৫২ অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ। এবং তৃণমূলের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪,৫১,০৭৮ টি ভোট অর্থাৎ প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট।
তবে এই বারে পুরনো প্রার্থীদের কেউই নেই। বরং লড়াই তিন দলবদলু প্রার্থীর মধ্যে। বিজেপির প্রার্থী কার্তিক পাল একদা ছিলেন জোড়া ফুলে। অন্য দিকে তৃণমূলের প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীকেও এক সময় দেখা যেত পদ্ম শিবিরে। আবার এই আসনে এ বারে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ইমরান রম্জ। তবে তিনিও এক সময় পরিচিত ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা হিসাবে। এখন এই তিন দলবদলুর মধ্যে কার কপাল খোলে সেটাই দেখার।
বালুরঘাট- Balurghat Loksabha Election 2019
এক সময়ে বাম দূর্গ বলে পরিচিত বালুরঘাটে আজ চারিদিকে যেন রামনাম চলছে। ১৯৭৭ থেকে টানা ১০ বার বাম শরিক আরএসপির দখলে ছিল এই লোকসভা কেন্দ্র। ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পরে ২০১৪-য় তৃণমূল প্রার্থী তথা নাট্য ব্যাক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ এই আসন থেকে জিতে দিল্লি গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁকে পরাজিত করেন বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার। সেই নির্বাচনে সুকান্ত মজুমদারের ঝুলিতে এসেছিল ৫,৩৯,৩১৭ টি ভোট অর্থাৎ প্রায় ৪৫ শতাশ ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫,০৬,০২৪টি ভোট অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট। ২০১৯ সালে আরএসপি প্রার্থী রনেন বর্মার ঝুলিতে ছিল মাত্র ৬ শতাংশ ভোট। তবে তার পর ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৪টি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি জিতেছিল বালুরঘাট, তপন এবং গঙ্গারামপুর ৩টি আসনে। তবে কুশমণ্ডিতে ২০১৯ লোকসভায় তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল মাত্র ৭৪০ ভোটের। আবার জেলা কমিটিতে ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ শিবিরের প্রাধান্য নিয়ে কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল সরব হন। পরে সেখানে যোগ দেন বিক্ষুদ্ধ নেতারাও।
এই বারে বালুরঘাটে তৃণমূলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্র। প্রার্থী দিয়েছে নওসাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফও। তাঁদের প্রার্থী মোজাম্মেল হক। এখন দেখার এই বারেও বালুরঘাটে পদ্মই ফোটে নাকি দলের গোষ্ঠী দন্ডকে সরিয়ে বালুরঘাটবাসীর মনে অন্য ফুলের চাষ করতে পেরেছে শাসক দল।