Loksabha Election 2024: প্রসূন কি তবে স্ট্রাইকার হয়ে গোল দেবেন নাকি রথীন-সব্যসাচীর সাঁড়াশি আক্রমণে নিজেই বাইরে চলে যাবেন হাওড়া লোকসভার
হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র, এমন এক আসন যেখানে তুমুল বাম আমলেও কংগ্রেস প্রার্থীকে জিততে দেখেছে বাংলা। স্বাধিনতার পরে প্রথমবার সাংসদ হন কংগ্রেসের সন্তোষ কুমার দত্ত। তারপরে অবশ্য এই আসনের দখল নেয় বাম। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ফের জয়ী হয় কংগ্রেস। তবে ৫ বছর পরে ফিরে আসে বামেরা। এরপর সিপিএমের সমর মুখার্জি সাংসদ ছিলেন প্রায় ১৫বছর। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে এই আসন থেকে জিতে সংসদে যান কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী। এরপর ১৯৯৬ সালে আবার এই আসন থেকে জিতে সাংসদ হন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী। তবে দু বছরের জন্য। ১৯৯৮ সালে এই আসনে প্রথম ঘাসফুল ফোটে। সাংসদ হন বিক্রম ঘোষ। সেই বার অবশ্য বিজেপির সঙ্গে জোট ছিল তৃণমূলের। তবে ১৯৯৯ সালে উপনির্বাচনে আবার এই আসনের দখল নেয় বামেরা। এরপর ২০০৯ সালে পাকাপাকি ভাবে ঘাসফুল ফোটে হাওড়ায়। সেই থেকে আজ অবধি তৃণমূল ক্ষমতায়। এখন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের গড় বললেও ভুল বলা হবে না। ২০১৩ সালে প্রথম ফুটবলের মাঝ মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দানে নামেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রথম ম্যাচেই গোল করেন তিনি। দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে দল প্রার্থী করে তাঁকেই। সেই থেকে তিনিই হাওড়ার সাংসদ। এই ভোটে তৃণমূলের টিকিটে তিনি প্রার্থী।
আবার বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী। এক কালে যিনি ছিলেন হাওড়া পুরসভার তৃণমূলের মেয়র। ২০২১ সালে পদ্ম হাওয়ায় গা ভাসিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। শিবপুর কেন্দ্রে প্রার্থীও হয়েছিলেন কিন্তু সে বারও তাঁর প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের কাছেই হারতে হয় তাঁকে। তৃণমূলের প্রার্থী মনোজ তিওয়ারির কাছে আউট হয়ে যান রথীন। তারপর রাজ্য রাজনীতিতে খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লেও লোকসভা ভোটে তাঁকেই পদ্ম প্রার্থী হিসাবে বেছে নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কানাঘুষোয় শোনা যায় শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রথীনের দলবদল থেকে লোকসভায় প্রার্থী হওয়া সব কিছুর পিছনেই হাত সেই অধিকারীবাবুর।
সিপিএম প্রার্থী করেছে আইনজীবী সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। বরাবর মমতা বিরোধী বলে পরিচিত। সমাজমাধ্যম থেকে নানা সংবাদমাধ্যমে বার বার তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে দৌলতে পরিচিতি রয়েছে বটে, তবে বাস্তবে মাঠে ঘাটের রাজনীতিতে তাঁর জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেই অর্থে দেখলে তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সব চেয়ে হেভিওয়েট হিসাবে এগিয়ে রেখেছে রাজনীতির কারবারিরা।
আবার গত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের দিকে তাকালে বোঝা যায় আসল লড়াই দুই ফুলে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রসূন পেয়েছিলেন ৪৭.৪৩% ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৩৮.৯০% ভোট। অন্য দিকে সিপিএম পেয়েছিল ৮.৬৮% ভোট এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল ২.৬৪% ভোট। সেই ভোটে ৭ বিধানসভার মধ্যে কেবল হাওড়া উত্তর বাদে বাকি ৬ কেন্দ্র থেকেই লিড পেয়েছিলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে সেই আসন জিতে নেয় তৃণমূল, অর্থাৎ সাত কেন্দ্রেই জোড়া ফুলের বিধায়ক রয়েছে এই মূহুর্তে। সেই দিক থেকে দেখলে তৃণমূলের পাল্লা ভারি। তবে চোরা স্রোত রয়েছে। যেমন হাওড়া শহরের প্রায় ৪৫% ভোটার হিন্দি ভাষী, যাদের মধ্যে রামমন্দিরকে নিয়ে একটি বড় আবেগ কাজ করতে পারে। দীর্ঘ ৬ বছর পুরসভা ভোট হয়নি এক কেন্দ্রের অন্তর্গত বালি ও হাওড়া পুরসভায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছে জলাভূমি ভরাট করে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ, সিন্ডিকেট রাজের মতো একাধিক অভিযোগ। তাই সেই সবকে হাতিয়ার করে বিজেপি চাইছে হাওড়ায় জয় পেতে। এখন দেখার মাঝমাঠের প্রসূন ‘ডজ’ করে গোল দেন নাকি নিজেই গোল খেয়ে হেরে বসে থাকেন।