Loksabha Election 2024: শিল্পাঞ্চলের দুই ফুল, পার্থ বনাম অর্জুন, রয়েছে দেবদূতও জিতবে কে, নজরে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র। এক সময়ে বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল। গঙ্গার পূর্ব পাড়ে একের পর এক পাট মিল ছিল এই কেন্দ্রের চালিকা শক্তি। আর তাই পাট মিলের উপর নিজেদের রাজত্ব কায়েম রাখতে চিরকাল মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলি। সেই নিয়ে কম উত্তেজনা, হিংসা দেখেনি এই কেন্দ্র। তা সেই বাম আমল থেকেই। পরবর্তী কালে নতুন শতাব্দীতে সেই হাল ধরেছে এখনকার দুই নেতা তৃণমূলের সোমনাথ শ্যাম এবং বিজেপির অর্জুন সিংহ। এই আসনে বিদায়ী সাংসদ বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। বাংলার রাজনীতিতে দলবদলুদের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে সেখানে উপরের দিকেই দেখা যায় তাঁকে। একসময় ছিলেন কংগ্রেসে। ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের টিকিতে জিতেই ভাটপাড়া থেকে কাউন্সিলর হন তিনি। তারপর ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। পরপর চার বার ঘাসফুলের টিকিটেই ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিধায়ক হন তিনি। মাঝে অবশ্য একবার ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটেও ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে সিপিএমের তড়িৎবরণ তপাদারের কাছে হেরে যান অর্জুন। এর পর ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপির টিকিতে লড়ে জয় পান অর্জুন। তবে তিন বছরের মাথায় আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন তিনি। যদিও তখনও খাতায় কলমে তিনি পদ্মের সাংসদ। তবে বিধি বাম। ভেবেছিলেন এই ভোটে ব্যারাকপুরে তাঁকেই প্রার্থী করবে দল। যদিও খবর পেয়েছিলেন আগেই, তবু কোথাও যেন বিশ্বাস ছিল দিদির উপরে। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকককে টিকিট দেয় তৃণমূল। আর তারপরেই ঘাসফুলে দু বছর কাটার আগেই আবার পদ্মে প্রত্যাবর্তন করেন অর্জুন। বিজেপির হয়ে লড়ছেন এই ভোটেও।
অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। দক্ষ সংগঠনকারি। দলের আস্থা তাঁর উপরেই। উত্তর ২৪ পরগণা বলয়ে ভাল প্রভাব রয়েছে তাঁর। যদিও ব্যারাকপুরের ভোটের অনেকটাই নির্ভর করে পেশি শক্তির উপরে। বিজেপি প্রার্থী অর্জুন রাজ্য রাজনীতিতে বেশি পরিচিত আর তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। ২০১৯ এবং ২০২১ ভোটের আগে পরে এই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে কম রক্ত ঝড়েনি এই ব্যারাকপুরে। বোমাবাজি, গুলি চলা, খুন যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছিল বাংলার শিল্পাঞ্চলে। অবশ্য অর্জুন এবং সোমনাথের বিরোধ অর্জুনের তৃণমূলের থাকার সময় থেকেই। তখন কংগ্রেস নেত্রী সোমনাথের মা। তারপর অর্জুন বিজেপিতে যোগদান করলেই তৃণমূলে যোগ দেন সোমনাথ। পরে অর্জুন ঘাসফুলে ফিরে এলে অবশ্য প্রকাশ্যে সেই বিরোধে খানিক ভাটা পড়লেও এখন সেই বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে। তৃণমূলের পার্থের সারথিও তিনিই। অবশ্য গত বিধানসভা ভোটের ফলাফলের দিকে তাকালেও খানিকটা স্বস্তিতেই শাসক দল। কারণ ৭টি বিধানসভার মধ্যে কেবল একটি ভাটপাড়াতেই জয় পেয়েছিল অর্জুন পুত্র পবন সিংহ। বাকি ৬ বিধায়ক তৃণমূলের। যাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রকাশ্যে অর্জুন বিরোধি রূপেই পরিচিত। তবে অর্জুনের পেশি শক্তিকেও অবজ্ঞা করতে নারাজ শাসক দল।
আবার বামেদের প্রার্থী অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। সাংস্কৃতিক জগতে দেবদূতের খানিক পরিচিতি থাকলেও সেই পরিচিতি ভোট বাক্সে কতটা প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এক সময়ে এই আসনে বামেদের ৬ বার সাংসদ করেছিল জনগণ। তখন প্রার্থী ছিলেন তড়িৎবরণ তপাদার। ২০০৯ সালে তাঁকে হারিয়ে সাংসদ হন তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে ইউপিএ ২ এর মন্ত্রীসভায় কয়েকদিনের জন্য রেলমন্ত্রীও হয়েছিলেন দীনেশ। ২০১৪ সালে জয়ে আরও বেড়েছিল ভোটের ব্যবধান। তবে ২০১৯ সালে পরাজয় প্রাক্তন তৃণমূল তথা বিজেপি প্রার্থী অর্জুনের কাছে। সেই ভোটে অর্জুন পেয়েছিলেন ৪৩.৩২% ভোট। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৪১.৯৬% ভোট। অন্যদিকে ২০১৯ ভোটে বাম-কংগ্রেসের ভোট কমে দাঁড়ায় মোট ১২.২১%। এই ভোটে তাঁদের পুঁজি বলতে এই ১২ শতাংশ ভোট ব্যাঙ্ক।
তাই রাজনৈতিক মহলের অবশ্য দাবি আসল লড়াই পার্থ বনাম অর্জুনের। দুই ফুলের লড়াইয়ে কে ফুটে উঠবে সেটাই দেখার।