LokSabha Election 2024: মাহাতো বনাম মাহাতো, পুরুলিয়ায় লড়াই ৬ মাহাতোর! কার ভোট কে কাটবেন, কার পালে হাওয়া?
সাঁওতালি নাচ, অযোধ্যা পাহাড় আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, পুরুলিয়া বললেই প্রথম মাথায় আসে এই দৃশ্য। পুরুলিয়ার ভোট অঙ্কটি কিন্তু অত সহজ নয়। এখানকার বিদায়ী সাংসদ বিজেপির জ্যোতির্ময় মাহাতো। ২০১৯ সালে পদ্ম ফুটিয়েছিলেন কুড়মি সম্প্রদায়ের জোর্তিময়। তৃণমূলের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো। ‘হাত’ প্রতীকে জোট প্রার্থী প্রবীণ নেতা তথা অভিজ্ঞ রাজনীতিক নেপাল মাহাতো। আবার এই আসনে জোটের সমীকরণকে অমান্য করে প্রার্থী দিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। ভোটে লড়ছেন ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো।
আসলে পুরুলিয়ার রাজনীতিতে মাহাতোদের নিয়ে মাতামাতি সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। তাঁর কারণও রয়েছে। এই আসনের এক তৃতীয়াংশ ভোট কুড়মি সম্প্রদায়ের। বাকি ভোটারদের মধ্যে তফসিলি জাতি এবং অনান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোট প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ২০ শতাংশ ভোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের। তাই ক্ষমতার লড়াইয়ে তুরুপের তাস যে ‘কুড়মি’ সম্প্রদায়ের ভোট তা বিলক্ষণ জানেন রাজনীতির কারবারিরা। ১৯৬২ সালে এই তাসেই প্রথম জয় পেয়েছিল লোক সেবক সঙ্ঘ। তারপর থেকে পুরুলিয়ার রাজনীতিতে ‘কুড়মি’ সম্প্রদায় হয়ে উঠেছে ‘এক্স ফ্যাক্টর।’ ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ দীর্ঘদিন জঙ্গলমহলের ক্ষমতা ধরে রেখেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। কিন্তু তখনও মাহাতোদের বাইরে গিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথা ভাবেনি বামেরা। ১৯৭৭ থেকে পর পর ৫ বার সাংসদ হন চিত্তরঞ্জন মাহাতো। ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে প্রার্থী হন বীর সিংহ মাহাতো। তবে ২০০৯ সালে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি দল। বরং সেই জায়গা প্রার্থী হন নরহরি মাহাতো। সেই শেষ তারপর আর এই আসনে জিততে পারনি বামেরা, বরং যত দিন গিয়েছে কমেছে তাঁদের ভোট।
২০১৪ সালে তৃণমূলের হয়ে লড়ে অযোধ্যা পাহাড়ে ঘাসফুল ফোটান মৃগাঙ্ক মাহাতো। সেই ভোটে দেড় লাখের বেশি ভোট জয় পেয়েছিল তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের বিদায়ী সাংসদ নরহরি মাহাতো। তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। আর বামেদের ঝুলিতে ছিল ২৬.০৯% ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা নেপাল মাহাতো, পেয়েছিলেন ২১.৪১% ভোট। বিজেপি প্রার্থী বিকাশ ব্যানার্জি পেয়েছিলেন মাত্র ৭ শতাংশ ভোট।
তবে ২০১৯ সালে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে যায় ভোটের সমীকরণ। নিজেদের ভুল শুধরে কুড়মি সমাজ থেকেই নিজেদের প্রার্থী বেছে নেয় পদ্ম শিবির। ৪৯.৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে দু লাখের বেশি ব্যবধানে তৃণমূলের মৃগাঙ্ককে পরাজিত করেন বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। ঘাসফুলের ভোট ২০১৯ সালে চার শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৪.১৯ শতাংশে। কেবল একটি বিধানসভা মানবাজারে এগিয়ে ছিলেন ঘাসফুল প্রার্থী। তৃতীয় স্থানে প্রায় ৬ শতাংশ ভোট পান কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো। আর ফরওয়ার্ড ব্লকের ভোট প্রায় ২১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৫.০৫ শতাংশে।
২০২১ বিধানসভা ভোটের ফলের দিকে তাকালেও তা খুব একটা আশাজনক নয় তৃণমূলের জন্য। কারণ ৭ বিধানসভার মধ্যে বাগমুন্ডি এবং মানবাজার কেবল দুটি বিধানসভায় জয়ী হয় শাসক দল। বাকি ৫ বিধানসভায় বলরামপুর, জয়পুর, পুরুলিয়া, কাশীপুর এবং পারাতে জয় পায় বিজেপি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই বার ভোটের যুদ্ধ মূলত দুই ফুল এবং হাতের মধ্যে। একদিকে বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। দিলীপ ঘোষ থেকে সুকান্ত মজুমদার ছাত্রজীবন থেকে সঙ্ঘের সদস্য জ্যোতির্ময়ে চিরকাল রাজ্য নেতৃত্ব তো বটেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘গুড বুকে’ রয়েছেন। কিছুদিন আগেই তাঁর সমর্থনে পুরুলিয়ায় সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবার আদিবাসী দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার পর থেকেই পদ্ম পালে হাওয়া বেড়েছে বলে খবর।
অন্যদিকে ঘাসফুলের প্রতীকে রয়েছেন পুরুলিয়া জেলার দীর্ঘদিনের নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক তথা পোড় খাওয়া রাজনীতিক শান্তিরাম মাহাতো। আবার কংগ্রেসের প্রার্থী নেপাল মাহাতোকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ রাজনৈতিক দল গুলিও। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লক আলাদা করে প্রার্থী দেওয়ায় জোটের ভোট কাটাকুটির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে কাঁটা আরও রয়েছে। তিনি হলেন রাজ্যের আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। বার বার কুড়মি সাংসদ পেলেও পূরণ হয়নি তাঁদের সম্প্রদায়ের জাতিসত্তার দাবি। তাই আর কোনও রাজনৈতিক দলে ভরসা না রেখে এই বার নিজেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন তিনি। কুড়মি সমাজে তাঁর প্রভাব বেশ ভাল। এখন অজিত কার ভোট কতটা কাটবেন তার উপরে নির্ভর করছে শেষ হাসি হাসবেন কোন মাহাতো!
এখানেই শেষ নয়, রয়েছেন আরও এক মাহাতো। পুরুলিয়া লোকসভায় প্রার্থী দিয়েছে এসইউসিআই প্রার্থী দিয়েছে। তাঁদের হয়ে ভোটে লড়ছেন সুস্মিতা মাহাতো।