LokSabha Election 2024: যুযুধান দুই পক্ষ, পদ্ম এবং ঘাসফুল, অধিকারীদের আধিপত্য কি বজায় থাকবে কাঁথিতে নাকি ম্যাজিক দেখাবে উত্তম
এই লোকসভার লড়াইয়ে অধিকারীর পরিবারের আরেক গড় কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে কখনও জাতীয় কংগ্রেস, কখনও জনতা পার্টি আবার কখনও প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থেকেছে। প্রথম লাল আবির উড়েছিল ১৯৮০ সালে। সাংসদ হয়েছিলেন সুধীর কুমার গিরি। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরেই আবার আসন পুনরুদ্ধার করে কংগ্রেস। ১৯৮৯ থেকে টানা চার বার সাংসদ হয়েছেন বামেদের সুধীর কুমার গিরি।
১৯৯৯ সালে প্রথম ঘাসফুল ফুটেছিল কাঁথিতে। সাংসদ হয়েছিলেন নীতিশ সেনগুপ্ত। ২০০৪ সালে আবার হারা আসন উদ্ধার করে বামেরা। ৫০ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন প্রশান্ত প্রধান। কিন্তু সেই জয় স্থায়ী হয়নি। ২০০৯ সালে প্রবল মমতা ঝড়ে জয় পায় ঘাসফুল শিবির। ১ লক্ষ ২৯ হাজার ভোটে প্রশান্ত প্রধানকে পরাজিত করেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শিশির অধিকারী। অবশ্য ২০০৯ সালে তৃণমূলের জয়ের পিছনে নন্দীগ্রাম আন্দোলন অন্যতম কারণ। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও প্রার্থী হন তিনিই। দুই ভোটে যথাক্রমে ৫২% এবং ৪৯% ভোট পান শিশির অধিকারী। তবে দুই ভোটে একটা পার্থক্য ছিল। তা হল ২০১৪ সালে ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। কিন্তু ২০১৯ সালে সেটাই বদলে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপির দেবাশীস সামন্ত। সিপিএমের পরিতোষ পট্টনায়ক পান ৫ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসের ঝুলিতে আসে ১.১৮% ভোট।
কিন্তু ২০১৯ ভোটের পরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল অধিকারী বাড়ির শিবির বদলানো। প্রথমে শুভেন্দু এবং তারপর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী, সৌম্যেন্দু অধিকারী এবং বাবা শিশির অধিকারী সবাই এখন ‘মোদীজির সৈনিক’। এই ভোটে কাঁথি কেন্দ্রে আর ভোটে লড়ছেন না প্রবীণ বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারী। বিজেপির টিকিটে কাঁথিতে অধিকারী বাড়ির প্রতিনিধিত্ব করছেন শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দ্যু অধিকারী।
তৃণমূল প্রার্থী করেছে পটাশপুরের বিধায়ক, তথা পূর্ব মেদিনীপুরের সভাধিপতি উত্তম বারিককে। এলাকায় যার কাজের ছেলে বলে বেশ ভাল পরিচিতি রয়েছে উত্তমের।
অন্যদিকে জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী ভট্টাচার্য। তবে ভোটের অঙ্ক অবশ্য বলছে অন্য কথা। আদপে এই আসনে লড়াই এই বার তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। ২০১৯ লোকসভা আসনের ফল অন্তত সেই কথাই বলছে। এবারের দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে তাঁদের কাছে সম্বল বলতে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ৬ শতাংশ ভোট।
তবে ফল কী হতে পারে তা আঁচ করা বেশ কঠিন। কারণ ২০১৯ সালের ভোটের ভাগ কী ভাবে হবে তা বলা মুস্কিল। আবার ২০২১ সালে বিধানসভার ভোটের নিরিখে পটাশপুর, চাঁদিপুর এবং রামনগর ৩টি আসন তৃণমূলের দখলে। আর কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, খেজুরি এবং ভগবানপুরে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
দু’দলের বিরুদ্ধে চোরা স্রোত রয়েছে। ভোটের আগে দলবদল করায় ‘বিশ্বাসঘাতকের’ তকমা পেয়েছেন শুভেন্দুরা। সেই সুর টেনেই একাংশের ক্ষোভ রয়েছে অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে। আবার ২০২১ দলবদলের আগে অবধি মেদিনীপুরে দলের রাশ ছিল শুভেন্দুদের হাতে, তাই চাকরি চুরি থেকে অনান্য দুর্নীতির দায় কেউ কেউ চাপিয়েছে বিরোধী দল নেতার উপরে। সঙ্গে রয়েছে আদি এবং নব্য বিজেপির দ্বন্দ্ব। অবশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। তবে সব কিছুর উপরে রয়েছে অধিকারী পরিবারের প্রভাব। তাই শিকে কার ভাগ্যে ছিঁড়বে তা বোঝা যাবে ৪ তারিখেই।