LokSabha Election 2024: যাদবপুরে ত্রিমুখী লড়াইয়ে সায়নী-সৃজন-অনির্বাণ! ভোট কাটাকুটিতেই মিলবে বিজয়ীর নাম, বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা
যাদবপুর আর রাজ্য রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে অতপ্রত ভাবে। এই আসনে ১৯৮৪ সালে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে রাজনৈতিক উত্থানের সূচনা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ১৯৭৭ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্ম। তার আগে প্রথমে কলকাতা দক্ষিণ পশ্চিম এবং আলিপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল এই কেন্দ্র। সেই সময় স্বাধীনতার পরে প্রথমবার জয় পেয়েছিল অসীমকৃষ্ণ দত্ত। পরের ভোটে ১৯৫৭ সালে জয়ী হন নির্দল প্রার্থী বীরেন রায়। এরপর ১৯৬০ থেকে টানা চার বার জয়ী হন বাম প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ দাশগুপ্ত। কিন্তু সেই সময় ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল অবধি এই আসন ছিল কলকাতা দক্ষিণ পশ্চিমের অধীন। ১৯৬৭ সালে বদলে এই কেন্দ্র আলিপুরের অন্তর্গত হয়। তখন পরপর দুবার জয়ী হয় ইন্দ্রজিৎ দাশগুপ্ত।
এরপর ১৯৭৭ সালে যাদুবপুর কেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর থেকে সাংসদ হন পোড় খাওয়া বাম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দু’বার এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সাংসদে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধাক্কা লাগে ১৯৮৪ সালে। তৎকালীন কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ১৯ হাজার ভোটে হেরে যান সোমনাথ। তারপর আর কোনদিন এই আসনে প্রার্থী হননি তিনি। ১৯৮৫ সালে বোলপুর থেকে ফের সাংসদ হন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
মমতা ১৯৮৪ সালে জিতলেও, ১৯৮৯ সালে আবার নিজেদের দুর্গ পুনরুদ্ধার করে বামেরা, পরাজিত হন মমতা। তারপর অবশ্য ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল অবধি টানা দক্ষিণ কলকাতা আসনে জিতেছেন তিনি। ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে পরপর দুবার জয়ী হন বাম প্রার্থী মালিনী ভট্টাচার্য।
তবে ১৯৯৬ সালে আবার বামেদের হাতছাড়া হয় যাদবপুর। কংগ্রেসের টিকিটে কৃষ্ণা বসু। ঘটনাচক্রে কৃষ্ণা বসু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইপো শিশিরকুমার বসুর স্ত্রী। প্রথমে কংগ্রেস পরে ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন কৃষ্ণা বসু।
তবে ২০০৪ সালে আবার ঘাস শিবির ত্যাগ করে বামেদের কাচে ফিরে যায় যাদবপুর। সাংসদ হন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা সিপিএমের অন্যতম প্রধান মুখ সুজন চক্রবর্তী। এই বারে অবশ্য তিনি দমদম লোকসভা কেন্দ্রের জোট সমর্থিত বাম প্রার্থী।
২০০৯ সালে পাকাপাকি ভাবে কায়েম হয় তৃণমূলের রাজত্ব। এককালের বাম দূর্গে জয়ী হন গায়ক কবীর সুমন। ২০১৪ তৃণমূল প্রার্থী করে সুগত বসুকে। সংসদে যান তিনিও। পরের বার ২০১৯ সালে আবার প্রার্থী বদল করে তৃণমূল। ভোটে লড়েন টলিউডের নায়িকা মিমি চক্রবর্তী।
২০০৯ থেকে ২০১৯ যাদবপুরে উত্তরোত্তর বেড়েছে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান। আর তার সঙ্গে যত সময় গিয়েছে বামেদের যাদবপুরে ফিকে হয়েছে লাল রং। ২০০৯ সালে কবীর সুমনের কাছে সুজন চক্রবর্তী পরাজিত হয়েছিলেন প্রায় ৫৬ হাজার ভোটে। তখন তৃণমূল পেয়েছিল ৪৯% ভোট। বামেরা পেয়েছিল ৪৪% ভোট। সেই ভোটে বিজেপির ঝুলিতে আত্র ১.৯০% ভোট।
২০১৪ সালে সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজারে। তৃণমূল পেয়েছিল ৪৫% ভোট। দ্বিতীয় স্থানে বামেদের ভোট কমে হয় ৩৬% ভোট। সেই বারও প্রার্থী ছিলেন সুজন চক্রবর্তী। বিজেপির ভোট এক লাফে ১১% বেড়ে হয় ১২.২০% ভোট। চতুর্থ স্থানে কংগ্রেস পেয়েছিল ২.০৭% ভোট।
২০১৯ সালে মিমি চক্রবর্তী সেই ব্যবধান বাড়িয়ে ২ লাখ ৯৫ হাজার ভোটে জয় পান। তৃণমূল দল হিসাবে পায় ৪৭% ভোট। কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে বামেদের জায়গা ২৭.৩৩% ভোট পেয়ে উঠে আসে বিজেপি। প্রার্থী ছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা অনুপম হাজরা। তৃতীয় স্থানে বামেদের আইনজীবি প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ২১.০৪% ভোট।
এই বারে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। যদিও এর আগে আসানসোলে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীর কাছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী অনির্বাণ গাঙ্গুলি। বামেরা প্রার্থী করেছে তরুণ নেতা সৃজন ভট্টাচার্যকে। যদিও তিনিও অবশ্য ২০২১ নবান্ন অভিযানে সিঙ্গুর কেন্দ্র পরাজিত হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে।
বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, ভাঙর, সোনারপুর দক্ষিণ, সোনারপুর উত্তর, টালিগঞ্জ এবং যাদবপুর এই ৭ বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আজকের যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র।
তবে ভোটের অঙ্কের দিকে তাকালে এই আসন ঘাস শিবিরের জন্য বেশ সন্তোষজনক। কারণ সাত লোকসভার মধ্যে ২০১৯ সালে ভোটের লড়াইয়ে সাত কেন্দ্রেই এগিয়েছিল তৃণমূল। আর ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ৬টিতে জয় পায় ঘাসফুল। তবে ১টি আসন ভাঙরে জয় পায় আইএসএফ। বিধায়ক হন নওসাদ সিদ্দিকি। এই ভোটে আইএসএফ প্রার্থী করেছে নুর আলম খানকে। আর এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট শাসক দলের বড় ভরসা। তাই সেই ভোট যদি কাটাকুটি হয় তা হলে বদলাতেও পারে ভোট অঙ্ক। তবে উত্তর পাওয়া যাবে কয়েকদিন পরেই।