LokSabha Election 2024: দুই নায়কের লড়াইয়ে ইস্যু সেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান! রয়েছে চোরাস্রোত, শিকে ছিঁড়বে কার

0 22

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র। বাংলা ছবির সুপারস্টার দেবের কেন্দ্র। দেবের নিজের বাড়ি এই কেন্দ্রের কেশপুর বিধানসভার মহিষদায় গ্রামে। সেখানেই তাঁর বাবাদের চার ভাইয়ের ভিটে। সেই অর্থে ঘাটালের ভূমিপুত্র তিনি। ২০১৪ সালে একপ্রকার জোর করেই দেবকে প্রার্থী করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেব বলেন, ‘আমাকে কিনতে গেলে টাকা পয়সা, ভয় দেখিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে কিনতে হবে।’ আর তাই ‘দিদি’র ভালবাসার ডাকে খানিকটা অনিচ্ছা খানিকটা সংশয় নিয়ে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের হয়ে ঘাটালে প্রার্থী হন দীপক অধিকারী ওরফে দেব। প্রথমবার রাজনীতির ময়দানে নেমেই সাফল্য। যদিও সেই ভোটে আরও অনেক তারকাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল, তাঁদের মধ্যে কেউ সফল হয়েছিলেন কেউ মুখ থুবড়ে পড়েছেন। তবে দেব জয়ীদের তালিকায়। প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিপক্ষে সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানা পেয়েছিলেন ৩১ শতাংশ ভোট। সেই ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল প্রায় ৮ শতাংশ ভোট আর বিজেপির ঝুলিতে ছিল মাত্র ৬ শতাংশ ।

২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পরে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র তৈরী হয়। প্রথমবার এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিলেন বামেরা। সাংসদ হয়েছিলেন গুরুদাস দত্ত। কিন্তু তারপরেই ২০১৪ সালে এই আসনের দখল নেয় ঘাসফুল শিবির।

২০১৯ সালেও তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়েন দেব। দ্বিতীয়বার লড়াইয়ে প্রধান বিপক্ষের আসনে উঠে আসে বিজেপি। প্রার্থী ছিলেন একদা মেদিনীপুরের দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ। কর্মক্ষেত্র হওয়ার সুবাদে মেদিনীপুরে বেশ জনপ্রিয় ভারতী। তবু হারতে হয় তৃণমূলের কাছে। দেব প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। উলটো দিকে বিজেপি জয় না পেলেও ৬ শতাংশ থেকে ভোট বেড়ে হয় ৪০.৯৭ শতাংশ। বামেদের ভোট নেমে আসে ৬ শতাংশে। আর কংগ্রেস পায় মাত্র ২ শতাংশ ভোট।

এই বার লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগে নিজের সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করেন দেব। জানিয়েও দিয়েছিলেন আর ভোটে লড়বেন না তিনি। তবে বিধি বাম। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে আবার ফিরতে হয় তাঁকে। আসলে তৃণমূলও জানে দেব ছাড়া এই বার ঘাটালে জয় বেশ কঠিন।

বিজেপি প্রার্থী করেছে একদা দেবের সহকর্মী বাংলা সিনেমার আরেক নায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে। যদিও নায়ক হিয়াসবে দেবের মতো নাম, যশ কোনোটাই অর্জন করতে পারেননি হিরণ। পর্দার না হলেও রাজনীতির ময়দানে দেবকে মাত দিতে মরিয়া তিনি।  প্রার্থী হিসাবে নাম প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই জোরকদমে মাঠে নেমেছেন হিরণ। ছুটে বেড়াচ্ছেন লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি প্রান্তরে। নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন দেবের বিরুদ্ধে। তোপ দেগেছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়েও। কেন শুধু ভোট এলেই শাসকদলের মুখে শোনা যায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ‘গাজন’? সেই নিয়ে নিশানা করেছেন দেবকে।

তৃণমূলের অবশ্য পালটা যুক্তি কেন্দ্রের সরকার ইচ্ছে করে টাকা আটকে রেখেছে। তবে আর কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নয়, রাজ্য নিজেই বাস্তবায়িত করবে ঘাটালের মানুষের স্বপ্ন। প্রসঙ্গত, ১৯৫৯ সালে মানসিংহ রিপোর্টের ভিত্তিতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ছিল। ১৯৮২ সালে ঘাটালের শীলাবতী নদীর পাড়ে প্রকল্পের শিলান্যাসও হয়। বরাদ্দ হয় টাকা। তবে এক অজ্ঞাত কারণে কাজ আর হয়নি। ফের ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থা মাস্টার প্ল্যানের জন্য ডিপিআর তৈরির কাজ শুরু করে। ১৭৪০ কোটি প্রকল্প ব্যয় ধার্য হয়। ২০১৫ সালে জিএফসি (গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন) প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়। ২০২২ সালে কেন্দ্র প্রকল্পটি ‘ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বর্ডার এরিয়া’ প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয় রাজ্য সরকারকে। রাজ্য সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। গত বছর ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে টাকা এখনও বরাদ্দ হয়নি। তৃণমূলের দাবি, গত বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সাংসদ, বিধায়কদের দিল্লিতে গিয়ে এ ব্যাপারে আন্দোলন করতে বলেছিলেন। তাতেই চাপে পড়ে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। বিজেপির পালটা দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই উদ্যোগী হয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে তাই হলে টাকা এখনও এলোনা কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।

যে দেবের উপরে বাজি ধরে ঘাটালে জিততে চায় তৃণমূল, সেই হারের জন্যও দায়ী হতে পারে। কারণ রয়েছে চোরাস্রোত। কিছুদিন আগেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সংঘাত সামনে এসেছিল, অনেকে মনে করেন আপাতভাবে তাঁর রাজনীতির ছাড়ার কারণও ছিল সেটাই। যদি শেষ অবধি ভোটের লড়াইয়ে ফিরেছেন দেব। সঙ্গে রয়েছে সাংসদকে না পাওয়ার ক্ষোভ। ২০২১ সালে ৭ বিধানসভার মধ্যে ৬টিতে জয় পায় তৃণমূল। আর ঘাটাল বিধানসভায় জয় পায় বিজেপি।

আবার ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে দুটি কেন্দ্র পাঁশকুড়া পশ্চিম এবং ডেবরায় পিছিয়ে ছিল ঘাসফুল। পিংলায় লিড ছিল মাত্র ১৬৯৮ ভোটে। বড় লিড দিয়েছিল কেশপুর। তবে ২০২১ সালে বিধানসভায় কমে যায় সেই ব্যবধান। এমনকি দেবের গ্রামেই হারতে হয়েছিল তৃণমূল প্রার্থীকে।

দশ বছর ধরে কেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হল না তা নিয়েও ক্ষুব্ধ একাংশ। এই আসনে জোট সমর্থিত বাম প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়। এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান তৃণমূল বলছে রাজ্য একাই নাকি করবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। ‘এত টাকা রাজ্যের আছে নাকি?’ এখন দেখার বন্যার চোরা স্রোতের মধ্যেই ফুটে উঠবে পদ্ম নাকি ভূমিপুত্রকেই আবার বেছে নেবে ঘাটালবাসী!   

Leave A Reply

Your email address will not be published.