LokSabha Election 2024: দমদমে ত্রিমুখী লড়াইয়ে বাম-ঘাস-পদ্ম! কার বিমান উড়বে বলবে সময়

0 26

দমদম লোকসভা কেন্দ্র। খড়দহ, দমদম উত্তর, পানিহাটি, কামারহাটি, বরানগর, দমদম এবং রাজারহাট-গোপালপুর। এই ৭ কেন্দ্র নিয়ে আজকের দমদম লোকসভা কেন্দ্র। গত ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন বার জিতে ১৫ বছর ধরে এখানকার সাংসদ তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক সৌগত রায়। যদিও এখন দমদম ঘাসফুলের রমরমা, বিটিরোডের দুই ধার পালাবদল দেখেছে বহুবার। এমনকি অতীতে দুবার ঘোর বাম জমানায় ফুটেছে পদ্মও।

১৯৭৭ সালে এই আসনে জয়ী হয়, ভারতীয় লোক দল। তারস আগে অবশ্য ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ১০৮০ সালে প্রথম লাল আবীর উড়েছিল দমদম লোকসভায়। তবে চুরাশী সালে ইন্দিরা গাঁন্ধীর মৃত্যুর পরে শেষ বারের মতো আসন ফিরে পায় ‘হাত’ শিবির। ১৯৮৯ থেকে টানা তিনবার জয়ী হয় সিপিআইএম প্রার্থী নির্মলকান্তি চট্টোপাধ্যায়।

চমক লাগে ১৯৯৮ সালে। ব্যারাকপুরের সংলগ্ন এই শিল্পতালুকে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে পদ্ম ফোটে। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে পরপর দুবার জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী তপন সিকদার। বাজপেয়ী সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন, চারিদিকের লালের মধ্যে এক চিলতে গেরুয়া রঙ দেখে চোখ কপালে উঠেছিল অনেকেরই।

কিন্তু ২০০৪ সালে আবার আসন ফিরে পায় বামেরা। ২০০৪ সালে সাংসদ হন সিপিএমের অমিতাভ নন্দী। তবে সেই শেষ, এরপর ২০০৯ সালে প্রবল মমতা হাওয়ায় শিল্পতালুকে ঘাসফুল ফোটান সৌগত রায়। সেই থেকে পর পর তিন বার জয় পেয়েছেন সৌগত। সেই বার ৪৭% ভোট পেয়েছিলেন সৌগত। বামেদের পকেটে ছিল ৪৪% ভোট। আর প্রাক্তন সাংসদ বিজেপির তপন সিকদার পেয়েছিলেন ৫%ভোট।

২০১৪ সালে ভোটের সময় তৃণমূল পেয়েছিল ৪২% ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ভোট কমে বামেদের। অসীম দাশগুপ্ত পান ২৮% ভোট। অন্যদিকে ৫% থেকে আবার নিজেদের ভোট টেনে ২২শতাংশে তুলে আনেন বিজেপির তপন সিকদার।

এরপর ২০১৯ লোকসভার লড়াই। তপন সিকদারকে আর প্রার্থী করেনি দল। তাঁর বদলে প্রার্থী হন বহু দিনের পুরনো কর্মী তথা দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে। জয় না আসলেও ভোট বাড়ে। ৩৮% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে তখন বিজেপি। অন্যদিকে মাত্র ১৩% ভোট পেয়ে তৃতীয় বামেদের নেপালদেব ভট্টাচার্য। আর কংগ্রেসের সৌরভ সাহা পান ২% ভোট। তৃণমূলের ঝুলিতে আসে সেই ৪২% ভোট।

এই ভোটেও সৌগতর উপরেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল। তবে বিপক্ষে শমীককে আর প্রার্থী করেনি বিজেপি। তাঁকে লোকসভা লড়াইয়ের আগেই রাজ্যসভায় সাংসদ করেছে পদ্ম শিবির। তাঁর বদলে এই আসনে বিজেপির প্রার্থী দু’বার ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। যদিও ২০২১ সালে খড়দহ বিধানসভায় তৃণমূলের কাছে হেরে যান পদ্ম প্রার্থী। বামেদের প্রার্থী সিপিএমের অভিজ্ঞ রাজনীতিক তথা প্রবীণ নেতা সুজন চক্রবর্তী। এই মুহূর্তে রাজ্যে বামেদের অন্যতম প্রধান মুখ বটে তিনি।

সেই দিক থেকে দেখতে গেলে দমদমে ভিআইপি প্রার্থীদের ঘনঘটা। তবে ভোটের অঙ্ক অবশ্য বলছে লড়াই দুই ফুলের মধ্যেই। কারণ গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের দিকে তাকালে বামেদের পুঁজি বলতে বাম-কংগ্রেস মিলিয়ে ১৫ শতাংশ ভোট।

তবে বিমানবন্দর এলাকার দখল নেওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে তৃণমূল। কারণ গত লোকসভা ভোটে কেবল রাজারহাট-গোপালপুর বাদে সবকটি বিধানসভায় লিড পেয়েছিলেন সৌগত। কেবল রাজারহাট-গোপালপুরে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের সময় সবকটি আসন জিতে নেয় তৃণমূল। যদিও বরানগর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায় এখন কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী। তবে ২০২১ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিজেপির পার্নো মিত্রকে হারিয়ে জয় পেয়েছিলেন তাপস। লোকসভা ভোটের সঙ্গেই উপ নির্বাচন রয়েছে বরানগর বিধানসভাতেও। তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ আর বামেদের প্রার্থী প্রবীণ নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য।

তবে ভোটের অঙ্ক যাই বলুক না কেন, প্রচারে ময়দানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ প্রত্যেকে। বিজেপিন প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে নিয়ে গাড়িতে করে রোড শো করেছেন মোদী। পালটা তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে পদযাত্রা করেছেন মমতা। অন্যদিকে সিপিএমের তরুণ মুখ, দীপ্সিতা, মীনাক্ষিকে নিয়ে রোড শো করেছেন সুজন চক্রবর্তীও।

তবে চোরা স্রোত রয়েছে। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি থেকে বেআইনি নির্মাণ, একাধিক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে দমদম লোকসভার অন্তর্গত পুরসভাগুলির। সঙ্গে রয়েছে শিক্ষক দুর্নীতি এবং OBC সার্টিফিকেট বাতিলের মত ঘটনা। আর এই সব কিছুকে কাজে লাগিয়ে প্রচারে নেমেছে বিরোধীরা। সঙ্গে বাড়তি পাওনা হতে পারে তৃণমূলের ভিতরে নিজেদের মতের অমিল। কারণ কিছুদিন আগেই তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। আর এই ক্ষেত্রে সৌগত পড়েন প্রবীণদের দলে। অভিষেকের নিয়ম যদি বাস্তবায়িত হত তবে টিকিট পেতেন না সৌগত। কিন্তু অন্দরের খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই তা হয়নি। তাই সেই দিক থেকে দেখলে অভিষেকের পছন্দের প্রার্থী তালিকায় নেই দমদমের তৃণমূলের প্রার্থী।

আবার এর মধ্যেই মেটিয়াবুরুজে প্রচার করতে গিয়ে দমদমে বাম-রাম জোটের কথা বলে খোঁচা দিয়েছেন মমতা। তাঁর দাবি দমদমে বিজেপির সিপিএম প্রার্থী সুজন জিততে সাহায্য করবে আর তার বদলে বরানগরে বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষকে জিততে সাহায্য করবে সিপিএম। এই নিয়েও তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা, তাঁদের দাবি নিজের হার বুঝতে পেরেই আগে থেকে ঘুটি সাজাচ্ছেন মমতা। তবে বাস্তবে কার ভোট কোথায় যাবে তা বোঝা যাবে ১ জুন!

Leave A Reply

Your email address will not be published.