Loksabha Election 2024: মতুয়া ভোট কার, লড়াই শান্তনু বনাম বিশ্বজিতের, নজরে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র
মতুয়াই সব, রাখে মতুয়া মারে কে। বাংলার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে এটাই বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাম আমল থেকে এই আসনে জিততে ভরসা মতুয়া ভোট। যদিও তখন বনগাঁ বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল। ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পরে এই আসনের জন্ম। সেই বার তৃণমূলের টিকিঁটে জয় পান গোবিন্দচন্দ্র নস্কর।
বনগাঁ লোকসভা তৈরির অনেক আগে থেকেই মতুয়াদের বড় মা বীণপাণি দেবীর সঙ্গে বেশ ভাল সখ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সূত্রেই ২০১১ সালে তাঁর বড় ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে বিধানসভায় প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ভোটে জিতে মমতার মন্ত্রীসভায় ঠাই পান মঞ্জুল। কিন্তু তারপরে মঞ্জুলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। তবু মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ কাটেনি মমতার। কারণ তিনি বিলক্ষণ জানেন ঐ আসনে জয় পেতে গেলে ঠাকুরবাড়ির সমর্থন ছাড়া অসম্ভব। ২০১৪ সালে ভাই মঞ্জুলের জায়গায় তাঁর দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে লোকসভা ভোতে প্রার্থী করেন মমতা। সেই ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয় পায় তৃণমূল। কিন্তু কয়েকদিন পরেই মৃত্যু হয় কপিলকৃষ্ণের। তখন উপনির্বাচনে ২০১৫ সালে তাঁর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকে প্রার্থী করে ঘাসফুল। এদিকে মঞ্জুলকৃষ্ণের সঙ্গে ততদিনে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। আর তাই জেঠিমার বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হন মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুর। যদিও ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল।
রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে এখন দ্বিধাবিভক্ত ঠাকুর পরিবার। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হ্ন মমতাবালা ঠাকুর। আর বিজেপি প্রার্থী করে মঞ্জুলকৃষ্ণের ছোট ছেলেকে। মতুয়া স্ংঘাধিপতি হওয়ায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। জেঠিমাকে হারিয়ে সংসদে যান শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইস্যু হল সিএএ। নাগরিকত্ব বিলকে হাতিয়ার করেই সেই ভোটে জয় পায় বিজেপি। উলটো দিকে সিএএ নিয়ে মমতার বিপরীত অবস্থান বিপাকে ফেলে দেয় তৃণমূলকে। যদিও কোভিডের সময় কেন সিএএ হচ্ছে না বলে প্রশ্ন করে বিজেপি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন শান্তনু। তবে সেই সময় অমিত শাহের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপরেই ২০২১ সালে কেন্দ্রে মন্ত্রী হন শান্তনু ঠাকুর। এই বারেও বিজেপির প্রার্থী তিনিই। তবে ঠাকুরবাড়ির বউমা মমতাবালাকে আর প্রার্থী করার ঝুকি নেয়নি তৃণমূল। বরং আগে ভাগেই মতুয়া ম্ন পেতে অঙ্ক কষে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে ঘাসফুল শিবির। সেখানে গিয়ে আবার শপথ গ্রহণের সময় ‘হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের’ নামে শপথ নিতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন মমতাবালা ঠাকুর। তবে সেসব অন্য কথা।
এই আসনে ঘাসফুল প্রার্থী করেছে বিশ্বজিৎ দাসকে। সরাসরি ঠাকুরবাড়ির কেউ না হলেও মতুয়া সম্প্রদায়ের উপর তাঁর প্রভাবকে অস্বীকার করেন না দুই ফুলের কেউ। প্রথমে তৃণমূল তারপর বিজেপিতে গিয়ে বিধায়ক হন বিশ্বজিৎ। তবে পরে আবার জোড়া ফুলে ফিরে আসেন তিনি। এখন তিনিই বনগাঁয় তৃণমূলের ভরসা। যদিও রাজনীতির কারবারিদের মতে পাল্লা ভারী পদ্মেরই। একে শান্তনু নিজে ঠাকুর পরিবারের সদস্য। তার উপরে সিএএ ইস্যুতে তাঁর সক্রিয়তা একটু বেশি নম্বর দিচ্ছে। আবার মতুয়া স্ংঘাধিপতি হওয়ায় বিশ্বজিতের থেকে মতুয়াদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা খানিক বেশি বলেই মত অনেকের। আবার আগের ভোটের ফলের দিকে তাকালে তাও খুব একটা আশাজনক নয় শাসক দলের জন্য। ২০২১ বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রের ৭টি লোকসভার মধ্যে ৬টিতে জয় পায় বিজেপি এবং একটিতে তৃণমূল। যদিও সেই ৬টির মধ্যে একটি হল বাদগার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, যিনি এখন পদত্যাগ করে ঘাসফুলের প্রার্থী। আবার ২০১৯ লোকসভাতে শান্তনুর মোট প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৯.১১% এবং তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪১.১৪%।
এই আসনে জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস। তবে বনগাঁ লোকসভা তৈরির পর থেকেই যেন খানিকটা ব্রাত্য হয়ে পড়েছে তারা। একবারও এই আসনের দখল নিতে পারেনি বামেরা। কংগ্রেসের তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ২০০৯ এবং ২০১৪ লড়াইয়ে বাম প্রার্থী দেবেশ দাস দ্বিতীয় হলেও ২০১৯ সালে আর তাঁকে প্রার্থী করেনি বামেরা। সেই বারে তাঁদের ঝুলিতে এসেছিল এক লাখের কম মাত্র ৯০,১২২টি ভোট বা ৬.৪৪%। আর কংগ্রেস পায় ২২,৬১৮ অর্থাৎ ১.৬০% ভোট। অর্থাৎ জোটের সম্বল মাত্র ৮.০৪% ভোট।