LokSabha Election 2024: টেরাকোটার মন্দিরের ঘন্টা ছাপিয়ে এখন শুধুই প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া!ভোটের রাজনীতিতেও দাম্পত্য কলহ দেখছে বিষ্ণুপুর
মল্লার রাজের আমলে তৈরী টেরাকোটার মন্দির। বিষ্ণুপুর মানে এক সময়ে মানুষের কাছে ছিল এটাই। তবে আজ সেই চিত্র খানিকটা হলেও বদলেছে। এখন বিষ্ণুপুর বললেই বাংলার মানুষ বোঝেন স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য কলহ যা চার দেওয়ালের গণ্ডি ভেঙে আজ রাজনীতির ময়দানেও বিদ্যমান। তা নিয়ে কাদা ছোড়াছুঁড়িতে মেতে দুই রাজনৈতিক দল। অবশ্য তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের কথায় ‘এখন আর কোনও সম্পর্ক যখন নেই তখন দাম্পত্য কলহ কীসের’। এই আসনে বিজেপির প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
২০১১ সালে কোতুলপুর থেকে কংগ্রেসের টিকিতে বিধায়ক হন সৌমিত্র। পরে ২০১৩ সালে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৪ সালে ঘাসফুলের টিকিটে সাংসদ হন তিনি। এক লাখের বেশি ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের সৌমিত্র।
১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালে এই আসনে জয় পেয়েছিল ‘হাত’ প্রার্থী। ১৯৭১ সাল থেকে বামেদের বিজয় রথ যাত্রা শুরু করে। সেই রথ টানা ১১টি নির্বাচন জিতে থামে ২০১৪ সালে। ঘাসফুল ফোটে বাঁকুড়ায়। সাংসদ হন সৌমিত্র খাঁ।
২০১৯ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই সময়ে পদ্ম শিবিরে তাঁকে নিয়ে আসার পিছনে বড় হাত ছিল তৃণমূলের আরেক প্রাক্তনী মুকুল রায়ের। ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটেও বিষ্ণুপুরে জয়ী হন সৌমিত্র। ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূলের শ্যামল সাঁতরাকে পরাজিত করেন তিনি। ঘাসফুল পেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোট। এদিকে ততদিনে বামেরা অতীতের গৌরব প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। ঝুলিতে আসে মাত্র ৭ শতাংশ ভোট। আর কংগ্রেস পায় মাত্র ১.২৬ শতাংশ ভোট।
এই বার বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। ঘটনাচক্রে তিনি আবার বিজেপি প্রার্থীর প্রাক্তন স্ত্রী। সৌমিত্রের সঙ্গে সুজাতার আলাপ ২০১৩ সালে সৌমিত্র তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে। কাজের সূত্রে পরিচয়, তখন সুজাতা বাঁকুড়ায় তৃণমূলের কর্মী। তবে ২০১৯ সালে সৌমিত্র বিজেপিতে গেলে সুজাতাও যোগ দেন। পরে ফিরে আসেন তৃণমূলে। সুজাতার অভিযোগ বিবাহে আবদ্ধ থাকার পরেও অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সৌমিত্রের। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে আগেই। এখন তাঁরা একে অপরের প্রতিপক্ষ।
এই আসনে জোট সমর্থিত বামেদের প্রার্থী শীতল করিবর্ত। যদিও এই ভোটে তাঁদের সম্বল বলতে ২০১৯ এর বাম-কংগ্রেসের সম্মিলিত ৮ শতাংশ ভোট। আসল প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি।
ভোটের অঙ্ক খুব একটা সহজ নয় বিষ্ণুপুরে। ২০১৯ সালে বিজেপি জিতলেও ৭ বিধানসভার মধ্যে বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর এবং খন্ডাঘোষ এখন তৃণমূলের দখলে। ওন্দা, সোনামুখী আর ইন্দাস বিজেপির কাছে। যদিও ২০২১ সালে ৫টিতে জিতেছিল বিজেপি, ভোটের পর দুই বিধায়ক তৃণমূলে চলে আসেন। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে খানিকটা এগিয়ে তৃণমূল।
তবে সমস্যাও রয়েছে বেকারত্ব, জলকষ্ট, বালুচরী-তাঁতিদের দুরবস্থা, শিল্পাঞ্চলের রুগ্ন অবস্থা কিংবা এশিয়ার সব চেয়ে প্রাচীন সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় বিষ্ণুপুর রামশরণ মিউজ়িক কলেজের সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ার মতো বিষয়গুলিও নানা বিচ্ছিন্ন ক্ষোভ রয়েছে গোটা লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে।
এই নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন সুজাতা। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘২০১৯ ভোটে স্ত্রীর কর্তব্য করেছিলাম এই বার পাপের প্রায়শিত্ত করব। সাংসদ হিসাবে কোনও কাজ করেননি তিনি।’
আবার বিষ্ণুপুরে সুজাতার সমর্থনে প্রচার সভায় গিয়ে তাঁদের বৈবাহিক জীবনের কুটিলতা নিয়েও সৌমিত্র খাঁকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। মঞ্চ থেকেই তাঁর বক্তব্যের মাঝে তিনি বলেন, ‘সুজাতা একটু গুবলু গাবলু। আর ওঁর বরটা একটু স্মার্ট বেশি সেই জন্য ওকে ছেড়ে পালিয়েছে। ওই ছেলেটাকে সুজাতা কি করে বিয়ে করেছিল ভগবান জানে।’
অন্যদিকে এই সব বিষয়ে না ঢুকেই, নিজের কাজের ক্ষতিয়ান দিয়ে মানুষের মন পেতে চায় বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি ২২০ কোটি টাকার প্রকল্পে বিষ্ণুপুর-জয়রামবাটি রেলপথের কাজ শুরু করিয়েছেন। মোড়গ্রাম হয়ে সিউড়ি পর্যন্ত নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি করেছেন। সঙ্গে রয়েছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি।
তবে কার কথায় ভবি ভুলবে তা বলবে সময়!