LokSabha Election 2024: অনুন্নয়নের চোরাস্রোতের মধ্যে দুই ফুলের দ্বন্দ্ব, কোন পালে হাওয়া বেশি, কী বলছে বাঁকুড়ার ভোটের সমীকরণ
বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র। একসময়ের সবচেয়ে শক্ত বাম ঘাঁটির একটি। এখান থেকে ভোটে জিতে টানা ন’বার সাংসদ হয়েছেন বাম প্রার্থী বাসুদেব আচার্য। তবে প্রথম থেকেই কিন্তু বাঁকুড়া বাম মনস্ক ছিলেন না। স্বাধীনতার পরে ১৯৬৭ সাল অবধি ক্ষমতা ছিল কংগ্রেসের কাছেই। ১৯৬৭ সালে প্রথম বামেদের প্রার্থী জেএম বিশ্বাস জয়ী হন। কিন্তু পরের বছর আবার আসন পুনুরুদ্ধার করে ‘হাত’। ১৯৭৭ সালে ‘এমারজেন্সি’র পরে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের জনতা প্রার্থী জয়ী হয়। তবে তারপরে ১৯৮০ সাল থেকে এই আসনে কায়েম হয় বাম রাজত্ব। টানা ৯ বার জয় পান বাসুদব। ২০০৯ সালে কেন্দ্রে বাসুদেবের কাছে হারতে হয়েছিল অধুনা প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়াকেও। তখন অবশ্য তিনি কংগ্রেসে। তবে খেলা বদলায় ২০১৪ তে। রাজ্যে পালা বদলের পরে এই আসনে মুনমুন সেনকে প্রার্থী করে চমকে দেন মমতা। মমতা ম্যাজিকেই সেই বছর প্রায় ১ লাখ ভোটে জয় পান মুনমুন। ফুটে ওঠে ঘাসফুল। সেই ভোটে সিপিএমের বাসুদেব পেয়েছিলেন ৩১ শতাংশ ভোট, এবং তৃণমূলের মুনমুন সেন পেয়েছিলেন ৩৯ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে বিজেপি তৃতীয় স্থানে থাকলেও ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ২০.৩১ শতাংশে।
এরপরে ২০১৯ সালে মুনমুনকে আর প্রার্থী করেনি তৃণমূল। আবারও টিকিট পান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে শিকে ছেঁড়েনি। পদ্ম ফোটান ডাক্তারবাবু। প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ভোটে জয়ী হন সুভাষ সরকার। সেই ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৪৯.২% ভোট। তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছিল ৩৬.৫% ভোট। সিপিএমের ভোট কমে দাঁড়ায় ৭.৩ শতাংশে।
২০২৪ সালে লোকসভা ভোটেও বিজেপি প্রার্থী করেছে সুভাষ সরকারকেই। তৃণমূল আর বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করেনি এই বার। কারণ অন্দরের খবর সেই মুনমুন সেনের সময় থেকেই নাকি বাঁকুড়ার বাইরের কাউকে প্রার্থী করা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দলের মধ্যে। তাই মমতার ভরসা বাঁকুড়া লোকসভার তালড্যাংরা বিধানসভার বিধায়ক তথা বাঁকুড়ায় তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীকে। বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র অরূপ রাজনীতির ময়দানে তুখড়।
বামেরা প্রার্থী করেছে নীলাঞ্জনা দাশগুপ্ত। পেশায় আইনজীবী। ছাত্রাবস্থায় যুক্ত বাম রাজনীতির সঙ্গে। এর আগে নির্বাচনে লড়ার অভিজ্ঞতা বলতে বাঁকুড়া বিধানসভায় একবার উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাও তখন রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির এত রমরমা ছিল না। এই ভোটে জোটের সম্বল ২০১৯ সালের ৭.৩ শতাংশ ভোট।
বরং আসল যুদ্ধ দুই ফুলে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় ৭ বিধানসভার মধ্যে ৭টিতেই লিড পেয়েছিলেন সুভাষ সরকার। তবে ২০২১ সালে সেই অঙ্ক খানিকটা বদলে গিয়েছে। ৭টির মধ্যে তিনটি বিধানসভা রানীবাধ, রায়পুর এবং তালড্যাংরায় জয় পায় তৃণমূল। অন্যদিকে বাঁকুড়া, রঘুনাথপুর, শালতোড়া এবং ছাতনায় জয়ী হয় বিজেপি প্রার্থীরা। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ২০১৯ তুলনায় খানিকটা ভাল অবস্থায় রয়েছে তৃণমূল। আবার ৩ আসনে ঘাসফুলের জয় চাপে ফেলেছে পদ্ম শিবিরকেও। সঙ্গে রয়েছে অনুন্নয়নের চোরা স্রোত। এখন উন্নয়ন না হওয়ার কাকে দায়ী করবে বাঁকুড়া বাসী, তাঁর উপরেই নির্ভর করছে বাঁকুড়ার মাটিতে চাষ হবে কোন ফুলের।