LokSabha Election 2024: মালার নিশ্চিত জয়ে কাঁটা দেবশ্রী নাকি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ! কী বলছে ভোটের অঙ্ক

0 32

কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র। জন্মের সময় অবশ্য এই কেন্দ্রের নাম ছিল কলকাতা দক্ষিণ পূর্ব। তখন তাঁর মানচিত্র ছিল অন্যরকম। কাকতালীয় ভাবে ১৯৫২ সালে জন্মের পরেই গেরুয়া রং দেখেছিল দক্ষিণ কলকাতার অংশ। সাংসদ হয়েছিলেন আজকের বিজেপির যুগপুরুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। ভারতীয় জন সঙ্ঘের টিকিটে জয়ী হন তিনি। তবে সেই শেষ। তারপর আর ফিরতে পারেনি গেরুয়া শিবির। কলকাতা দক্ষিণ রাজ্যের সেই আসন যেখানে বাম শক্তি বরাবরই একটু দুর্বল।

১৯৫৭ সালে জয়ী হয়েছিল বাম প্রার্থী সাধন গুপ্তর। পরে ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালেও জয় পেয়েছিল বাম প্রার্থী রণেন্দ্রনাথ সেন এবং গণেশ ঘোষ। কিন্তু ১৯৭১ সালে যখন রাজ্যজুড়ে লাল রঙের ঘনঘটা তখন পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর কাছে হেরে যায় বামেরা। ১৯৭৭ সালে এই আসনে জয় পায় মোরারজি দেশাইয়ের জনতা পার্টি। সাংসদ হয় দিলীপ চক্রবর্তী। ১৯৮০ সালে আবার আসন পুনরুদ্ধার করে বামেরা। প্রার্থী ছিলেন সত্যসাধন চক্রবর্তী। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে আবার পালাবাদল। কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন ভোলানাথ সেন। ১৯৮৯ ভোলানাথ সেনকে হারিয়ে পুনরায় আসন উদ্ধার করে বাম প্রার্থী বিপ্লব দাশগুপ্ত। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এত অবধি কখনই এক বারের বেশি কোনও সাংসদকে পায়নি দক্ষিণ কলকাতা।

প্রথম সেই প্রথা ভাঙলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৪ সালে যাদবপুরে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের পরে ১৯৮৯ সালে বামেদের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে হেরে যান তিনি। এরপর ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৯ অবধি টানা কলকাতা দক্ষিণ আসনে জয় পেয়েছেন মমতা। এর মধ্যে ১৯৯১ এং ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হলেও, ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল-কংগ্রেস তৈরি করেন তিনি। সেই থেকেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। সেই সময় তাঁর সঙ্গে দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন অজিত পাঁজা, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতিক। যদিও অজিত পাঁজা পরে আবার তৃণমূলে ফিরতে যান।

এরপর ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে সেই জায়গার উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হন সুব্রত বক্সী। ২০১৪ সালেও তাঁকেই প্রার্থী করেছিল দল। তবে ২০১১ নিরীখে ২০১৪ সালের ভোটে একটা পরিবর্তন হয়েছিল। তা হল ২০১১ সালের উপনির্বাচনে সুব্রত বক্সীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বামেরা। ৩৪% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তিনি এখন তৃণমূলের নেতা। আর সুব্রত বক্সী পেয়েছিলেন ৬২% ভোট। জয়ের ব্যবধান ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার। কিন্তু ২০১৪ সালে তা বদলে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে বিজেপি। তথাগত রায় পান ২৫% ভোট। সুব্রত বক্সীর ঝুলিতে আসে ৩৬% ভোট। আর বামেদের নন্দিনী মুখার্জির ভোট কমে হয় ২৩%। সেই ভোটেই কংগ্রেসের টিকিটে লড়ে মালা রায় পেয়েছিলেন ৯% ভোট।

কিন্তু ২০১৫ সালে রাহুল-সনিয়ার ‘হাত’ ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন মালা রায়। ২০১৯ লোকসভা ভোটে কলকাতা দক্ষিণে তাঁকেই প্রার্থী করে দল। ৪৭% ভোট পেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজারের ব্যবধান নিয়ে জয়ী হন মালা। দ্বিতীয় স্থানে বিজেপির চন্দ্রকুমার বোস পেয়েছিলেন ৩৪% ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিল বামেদের নন্দিনী মুখার্জিই। ভোট কমে হয় ১১%। চতুর্থ স্থানে কংগ্রেসের ভোটও কমে, ঝুলিতে আসে কেবল ৩% ভোট।

এই বারেও কলকাতা দক্ষিণে তৃণমূল প্রার্থী করেছে মালা রায়কেই। ১৯৯৫ সালে প্রথম পুরসভার ভোট দিয়ে শুরু। সেবার কংগ্রেসের টিকিটে লড়ে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পুরপ্রতিনিধি হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০০ সালেই আবার পুরসভার ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোটে লড়েন তিনি। সে বারেও জয়ী হন। পরে আবারফ কংগ্রেসের ফিরে যান মালা। ২০০৫ সালে ভোটে পরাজিত করেন তৃণমূলের কাকলী ঘোষ দস্তিদারকে। ২০১০ সালেও কংগ্রেসের টিকিটে জয় আসে। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয় হয়। তারপরেই ২০১৫ সালে পুনরায় তৃণমূলে যোগ দেন মালা রায়।

কলকাতা দক্ষিণে বিজেপি প্রার্থী করেছে, রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে। জোট সমর্থিত বাম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম।

তবে প্রার্থী যেই হোক না কেন, ভোটের অঙ্ক অনেক এগিয়ে ঘাসফুল। কারণ কসবা, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, ভবানীপুর, কলকাতা বন্দর, রাসবিহারী এবং টালিগঞ্জ এই ৭ আসনের কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে ২০১৯ সালে দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে ৭টিতেই এগিয়েছিল তৃণমূল। ২০২১ সালেও বিধানসভা ভোটে ৭টি কেন্দ্রে জয় পেয়েছে তৃণমূল। আর শুধু জয় নয়, সাত কেন্দ্রের বিধায়কদের বেশিরভাগই তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। ভবানীপুর কেন্দ্রে বিধায়ক স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে বিধায়ক কলকাতার মেয়র ফিরফাদ হাকিম। তালিকায় রয়েছেন দেবাষীস কুমার, জাভেদ আহমেদ খান, বাবুল সুপ্রিয়ো থেকে রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের সব সুবিধার মধ্যেও দেবশ্রীর আশা দুটি বিষয় নিয়ে। যার একটা হল গত লোকসভায় ৫৯ ওয়ার্ডের কলকাতা দক্ষিণ আসনে বিজেপি এগিয়েছিল ২৬টিতে এবং তৃণমূল ৩৩টিতে। আর দ্বিতীয় অস্ত্র যা ভোটের মাঝেই দেবদূতের মতো এসেছে তা হল ভারত সেবাশ্রম এবং  সেই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক। কারণ ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয় রয়েছে কলকাতা দক্ষিণেই। তবে বামেদের আশা বড় ক্ষীণ। এখন মালার সুনিশ্চিত জয়ের স্বপ্নে বিজেপি জল ঢালতে পারে কি না তা বলবে সময়।      

Leave A Reply

Your email address will not be published.