কলকাতা, ২২এপ্রিল: গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) তরফে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের কথা ছিল। আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরে রাতে কমিশন একটি বিবৃতি জারি করে, তবে সেখানেও তালিকা সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ ছিল না।
ইতিমধ্যে ব্রাত্য বসুর সাংবাদিক বৈঠকের পর আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা আপাতত প্রকাশ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এক চাকরিহারা আন্দোলনকারী। তিনি বলেন, “১৩ তারিখের বৈঠকে উনি বলেছিলেন তালিকা প্রকাশ করবেন। এখন মনে হচ্ছে, সেটা ছিল একটা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। তাঁর কথায় ভরসা করে আমরা ২১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। ভরসা তো তাঁদের উপরই রাখা যায়, যাঁদের ওপর আস্থা রাখলে সুফলের উদাহরণ পাওয়া যায়। এখন তালিকা প্রকাশ করতে হবে, নাহলে আন্দোলন চলতেই থাকবে।”
অযোগ্যদের তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “তালিকা তো সুপ্রিম কোর্টই দিয়েছে। আমাদের কিছু চিহ্নিত করার নেই। সুপ্রিম কোর্ট নিজেই তা জানিয়েছে এবং সেটি প্রকাশ্য (পাবলিক ডোমেন)-এ রয়েছে।”
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তোলেন, তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ের পর বাকি দফাগুলি নিয়ে কমিশন কোনও মন্তব্য করছে না। তবে এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসুর সাফ দাবি, এমন কোনও তথ্য তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, “এসএসসি বা আমরা কাউন্সেলিং সংক্রান্ত ওই ধরনের কোনও কথা বলিনি। এসএসসি চেয়ারম্যানও এমন কিছু বলেননি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও এসবের কোনও উল্লেখ নেই। যা লেখা নেই, তা ধরে নিয়ে কাল্পনিক অভিযোগ কেন করছেন, বুঝতে পারছি না।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, উপযুক্ত আইনি পরামর্শ না পাওয়ার কারণেই ‘যোগ্য-অযোগ্য’দের তালিকা এখনও প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি, কাজে যোগ দিতে কোনও বাধা নেই এবং কারও বেতন বন্ধ করারও কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি।
পাশাপাশি ব্রাত্য বসু জানান, অযোগ্য তালিকার বাইরে বর্তমানে ১৭,২০৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ভাগ করা রয়েছে এবং সেই অনুসারে আমরা কাজ চালাচ্ছি। তবে এমন কোনও কাজ করবেন না, কিংবা এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যাতে রিভিউ পিটিশনে সেটা আপনাদের বিপক্ষে প্রভাব ফেলে।”
শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বার্তা, “আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ আইনি পরামর্শ নিয়েই নিচ্ছি। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন, আর আপনারা ফিরে গিয়ে আপনাদের কাজ করুন।”
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা রিভিউ পিটিশন করছি, তাই আপনাদের অনুরোধ করছি, এমন কিছু করবেন না যা আপনার রিভিউ পিটিশনকে দুর্বল করে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘিত হয় কিংবা আদালতের অবমাননা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে উপযুক্ত শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে যোগ দিতে অনুরোধ করছি। বেতন নিয়ে আমাদের দফতর কাজ করছে এবং এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। আগামীকালও ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসির মামলা রয়েছে। এসএসসি আপনারাই লড়ছে এবং একমাত্র সরকারই আপনাদের পাশে রয়েছে।”
ব্রাত্য বসু বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া এখনও চালু এবং কার্যকর রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সরকার এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাম্প্রতিক আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপযুক্ত শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।”
সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে চাকরিহারাদের পাশে আছেন। বিদ্যালয় শিক্ষাদফতর সবসময় তাঁদের স্বার্থে কাজ করছে। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে এবং আমরা রিভিউ পিটিশন করছি।”
Comments are closed.