নতুন দাবি শিক্ষকদের! এখনও অফিস-বন্দি এসএসসি কর্তারা

13

কলকাতা, ২২ এপ্রিল: গতকাল থেকে এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান করছেন চাকরিহারারা, তারা ঘেরাও করেছেন গোটা এসএসসি ভবন। যোগ্য অযোগ্যদের তালিকা না প্রকাশ করলে এবং তাদের বাকি দাবি গুলি না মানলে তারা এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করার বার্তা দিয়েছেন চাকরিহারারা।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই এসএসসি ভবনের সামনে রাস্তায় বারবার স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে চারপাশ। নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মূল দাবি—ওএমআর শিট এবং যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। আন্দোলনকারীদের একাংশের মত, যদি তালিকা প্রকাশ না করা হয়, তাহলে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করতেই হবে। সকাল থেকে নানা ধরনের বিক্ষিপ্ত মন্তব্য উঠে এলেও, আন্দোলনকারীরা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী করতে চলেছেন, সে বিষয়ে এখনও কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। আপাতত এসএসসি চেয়ারম্যান ও অন্যান্য আধিকারিকদের আচার্য সদনে ঘেরাও করে রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কমিশনের দফতরের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, তবে সকাল থেকে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে কোনও রকম সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।

এসএসসি ভবনের পাশাপাশি এবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরেও অনশন শুরু করেছেন শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা। সোমবার বিকেলে পর্ষদের তৃতীয় তলায় প্রথমে অবস্থানে বসেন তাঁরা, এরপর রাতের দিকে এসএসসির গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি বিভাগের আটজন শিক্ষাকর্মী ‘আমরণ অনশন’-এ বসার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তাঁরা কনফারেন্স রুমের ভিতরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, শিক্ষকদের মতোই তাঁদের ক্ষেত্রেও ‘ক্ল্যারিফিকেশন পিটিশন’ দাখিলের সুযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ‘যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা’ প্রকাশ করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

এসএসসি ভবনের গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, অবস্থানে অনেক শিক্ষিকাও অংশ নিয়েছেন, তাই সেখানে বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তবে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি বলেই অভিযোগ তাঁদের।

এসএসসি ভবনের ভিতরে সোমবার থেকে আটকে রয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার-সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। সোমবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ কমিশনের দফতরে খাবার পৌঁছাতে বাধা দেন। এমনকি মঙ্গলবার সকালেও চা ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে পরে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা এসএসসি ভবনের ভিতরে খাবার প্রবেশের অনুমতি দেবেন। সেই অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় আচার্য সদনে।

‘যোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানে অনড় ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই তালিকা প্রকাশ করেনি কমিশন। এই প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারীদের একাংশ তাঁদের মূল দাবি থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যদি কমিশন ‘যোগ্য’দের তালিকা প্রকাশে অক্ষম হয়, তাহলে অন্তত ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক।

আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমর্থনে এগিয়ে এল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতি (জুটা)-ও। সংগঠনের এক প্রতিনিধি মঙ্গলবার এসে উপস্থিত হন এসএসসি দফতরের সামনে। জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “এটা স্পষ্টভাবে এক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির উদাহরণ। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে যোগ্য ও অযোগ্যদের গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা চাই, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে দ্রুত যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।”

মঙ্গলবার বিধাননগরের ডিসি অনীশ কুমার আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনুরোধ করেন, যাতে এসএসসি ভবনের ভিতরে জল ও খাবার নিয়ে ঢুকতে বাধা না দেওয়া হয়। এই অনুরোধের কিছুক্ষণের মধ্যেই চাকরিহারা শিক্ষকরা কিছু বিস্কুট, কলা, তরমুজ এবং জলের ব্যবস্থা করেন। তাঁদের দাবি, এই সামগ্রী পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মীদের জন্য আনা হয়েছে।

এসএসসি ভবনের সামনে চলা আন্দোলনস্থলে এখনও পর্যন্ত কোনও বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় তিনটি বাড়ির একতলা খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে আন্দোলনরত মহিলারা সেখানে শৌচালয়ের সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। সেই প্রয়োজন থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার থেকেই এসএসসি ভবনের ভিতরে আটকে রয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ও অন্যান্য আধিকারিকরা। সোমবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ দফতরের ভিতরে খাবার পাঠাতে বাধা দেন। একই পরিস্থিতি ছিল মঙ্গলবার সকালেও—চা পর্যন্ত ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে পরে আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং খাবার প্রবেশে সম্মতি জানান। সেই অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এসএসসি ভবনের ভিতরে খাবার পৌঁছায়।

গতকাল সারারাত চাকরিহারারা রাস্তায় রয়েছেন, আজ সকালেও আন্দোলনরত রয়েছেন তারা। একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক জানান, “যদি দ্রুত যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ না করা হয়, তবে অযোগ্যদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন এবং সেই আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্য এক আন্দোলনকারী জানান, “আমরা কোনোভাবে নিস্ক্রিয় ছিলাম না। রাস্তায় বসে নজরদারি করছিলাম, যাতে এসএসসি চেয়ারম্যান যেন বেরিয়ে যেতে না পারেন।”

এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সহ কমিশনের অন্যান্য কর্মী ও আধিকারিকরা আচার্য সদনে আটকে রয়েছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কমিশনের দফতরে বর্তমানে ১২ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা কর্মী আটকে আছেন। মঙ্গলবার সকালে এক ব্যক্তি চা নিয়ে এসএসসি ভবনের ভিতরে ঢুকতে চাইলে, আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ তাঁকে বাধা দেন।

সোমবার গভীর রাতে এসএসসি-র তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা সন্তুষ্ট হননি। ফলে, তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এসএসসি ভবন (আচার্য সদন) ঘেরাও করে রাখেন। তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনিকেত মাহাতো-সহ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর প্রতিনিধিরা। জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে সোমবার রাতেই আন্দোলনরত শিক্ষকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে, আচার্য সদনের ভিতরে আটকে থাকা এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “এই আন্দোলনে এখন শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকারা নন, বাইরের বহু মানুষও এসে যুক্ত হয়েছেন।”

প্রসঙ্গত দুপুর দেড়টা নাগাদ বিকাশ ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। এসএসসি সোমবার গভীর রাতে একটি বিবৃতি প্রকাশ করার পর, ব্রাত্য বসু বলেন, “যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের মাইনে পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে এই আন্দোলনের বিশেষ কোনও মানে হয় না। আর যাঁরা সেখানে (এসএসসি দফতরের সামনে) অবস্থান করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অযোগ্য। সুপ্রিম কোর্ট যদি তাঁদের বিষয়ে কোনও গাইডলাইন না দেয়, তবে আমাদের কিছু বলার বা করার সুযোগ থাকে না। আমরা খুব শিগগিরই রিভিউ পিটিশনের পথে যাচ্ছি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টই আমাদের জন্য দিকনির্দেশ ঠিক করে দেবেন। আমরা যে পথে এগোচ্ছি, তাতে আন্দোলনকারীদের আস্থা রাখা উচিত। এখন সেই আস্থা রাখবেন কি না, তা তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”

Comments are closed.