ভাঙড়, ১৪ই এপ্রিল : ওয়াকফ সংশোধনী আইনের [Waqf Amendment Act] প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার [South 24 Parganas] ভাঙড় এলাকা। সোমবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) [Indian Secular Front (ISF)] কর্মীরা। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আইএসএফ কর্মীরা বাসন্তী হাইওয়ে [Basanti Highway] অবরোধ করেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
জানা গিয়েছে, নতুন ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই মুর্শিদাবাদে [Murshidabad] বিক্ষোভ চলছে। কলকাতায়ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। সোমবার আইএসএফ কর্মীরা কলকাতার রামলীলা ময়দানে [Ramlila Maidan] প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ভাঙড়, মিনাখাঁ [Minakha] এবং সন্দেশখালির [Sandeshkhali] আইএসএফ কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।
আইএসএফ কর্মীদের অভিযোগ, বাসন্তী হাইওয়ের উপর বৈরামপুরের [Bairampur] কাছে পুলিশ তাঁদের গাড়ি আটকে দেয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোজেরহাটেও [Bhojerhat] তিন রাস্তার মোড়ে গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এর ফলে আইএসএফ কর্মীরা বাধা পেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয় এবং তাঁরা গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা করেন। এরপর আইএসএফ কর্মীরা পথ অবরোধ শুরু করেন।
অবরোধের জেরে কলকাতা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা সংযোগকারী বাসন্তী হাইওয়েতে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রাস্তায় আটকে থাকেন যাত্রীরা। পুলিশ মাইকিং করে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আইএসএফ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। আইএসএফ-এর রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন। তাঁরা এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন এবং দোষী পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে, বিক্ষোভকারীরা ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে অনড় রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই আইন মুসলিমদের স্বার্থ বিরোধী এবং এর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, পুলিশ জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল এবং সেই কারণেই তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন কী? [What is Waqf Amendment Act?]
ওয়াকফ সংশোধনী আইন, ২০২৩ (Waqf Amendment Act, 2023) হল ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫-এর একটি সংশোধনী। এই আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপ করার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে। এই ট্রাইবুনাল ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ এবং অবৈধ দখলমুক্ত করার ক্ষমতা রাখে। এই আইনের বিরোধিতাকারীদের মূল অভিযোগ হল, এর মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁদের দাবি, এই আইন মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ওয়াকফ সংশোধনী আইন এবং এর প্রতিবাদ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই বিষয়ে মুখ খুলেছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন এবং তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চায়। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নেয় এবং কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করে।
Comments are closed.