আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস, যা প্রতি বছর ২৯ জুলাই উদযাপিত হয়, বাঘ সংরক্ষণ এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পালিত হয়। বাঘ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং বিপন্ন প্রাণীগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু গত শতাব্দীতে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। মূলত শিকার, আবাসস্থল ধ্বংস, এবং মানব-প্রাণীর সংঘর্ষের কারণে বাঘের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বনের রাজা সিংহ হলেও পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পশু কিন্তু বাঘ। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে সাইবেরিয়ান বাঘের নাম বিশ্ব বিখ্যাত।
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের সূচনা হয় ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ শীর্ষ সম্মেলনে। এই শীর্ষ সম্মেলনে ১৩টি বাঘের আবাসস্থলবিশিষ্ট দেশ একত্রিত হয়ে বাঘ সংরক্ষণের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে। শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা, যা “TX2” নামে পরিচিত।
বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দিবসটি বাঘ সংরক্ষণে সরকার, সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। বিভিন্ন সংস্থা এবং পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এই দিনে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষামূলক কার্যক্রম এবং তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিভিন্ন প্রদর্শনী, সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে মানুষকে বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝানো হয়।
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বাঘের আবাসস্থল রক্ষা, শিকার প্রতিরোধ, এবং বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এর পাশাপাশি, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং বাঘের সঙ্গে সহাবস্থান করতে সহায়তা করা হয়।
এদিকে, বাঘ সংরক্ষণে দেশের মধ্যে অসম অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। মানস এবং কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান বাঘ সংরক্ষণে সাফল্য পেয়েছে। বর্তমানে বাঘের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্যই মানস এবং কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়েছে। কাজিরাঙায় বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১২১ থেকে ১৩১টি।
অবশেষে, আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাঘ শুধুমাত্র একটি প্রাণী নয়, এটি আমাদের জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।