বিনা প্ররোচনায় নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের পাক হামলা, যোগ্য জবাব ভারতের

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ এপ্রিল: বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার রাতেও ফের গোলাগুলিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সীমান্ত। অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে রাতভর গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান সেনা। নিশানা করা হয়েছে ভারতীয় সেনাঘাঁটিগুলিকে।

পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। তবে এখনো পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নজরে রেখেছে সেনা ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন।

শনিবার সকালে নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনা। সেখানে জানানো হয়েছে, “২৫ এবং ২৬ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানি ঘাঁটি থেকে বিনা প্ররোচনায় গুলি ছোড়া হয়।”

সেনা আরও জানায়, “ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়, যার জবাবে সমান তীব্রতায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতীয় জওয়ানরা। তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।”

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন—যার মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক। এই ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে নয়াদিল্লি।

প্রথম ধাপে স্থগিত করা হয়েছে বহু পুরনো সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যত দিন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না-করছে, তত দিন এই চুক্তি কার্যকর হবে না। পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা, এবং তাঁদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সেনা সূত্রে খবর, দুই দেশের ক্রমশ খারাপ হতে থাকা সম্পর্কে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখায় রাতভর গুলি চালিয়ে তারা মূলত যাচাই করে নিতে চাইছে, ভারতীয় সেনা কতটা প্রস্তুত এবং সক্রিয়। তবে সেনা সূত্রে দাবি, যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার হাতে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর, এবং স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় হিমাচল প্রদেশের শিমলায়। এই চুক্তির অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল—জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ফলে নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণরেখাকে (LoC) দুই দেশই সম্মান জানাবে এবং মেনে চলবে।

চুক্তিতে আরও উল্লেখ ছিল, পারস্পরিক মতভেদ থাকলেও কোনও পক্ষ একতরফাভাবে এই সীমারেখা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে না। তা সত্ত্বেও, পাকিস্তান একাধিকবার এই শর্ত ভেঙেছে—নিয়ন্ত্রণরেখায় গুলি চালানো, অনুপ্রবেশ ঘটানো এবং সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন সেই লঙ্ঘনেরই উদাহরণ।

সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলার পর নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ইসলামাবাদ থেকে এখন শিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

Comments are closed.