Loksabha Election 2024: কেষ্টহীন বীরভূমে কী অবশেষে ফুটবে পদ্ম নাকি দেখা যাবে ঘাসফুলই
বীরভূমের ভোট হলেই তা সবসময় খবরে। সে লোকসভা ভোট হোক আর বিধানসভা ভোট হোক। সৌজন্যে কেষ্ট মন্ডল। একসময়ে কংগ্রেসের এক ছত্রাধিপতি রাজ থেকে এই আসন ছিনিয়ে নেয় বামেরা। তারপর ১৯৭১ থেকে ২০০৪ টানা নিজেদের দখলে রেখেছিল বীরভূমকে। লাল মাটির বীরভূমের রাজনীতির রং ছিল লাল। কিন্তু কাস্তে, হাতুড়ি, তারার বদলে ২০০৯ সালে সেই আসনে প্রথম ফোটে ঘাসফুল। প্রার্থী ছিলেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। এর পর পেরিয়ে গিয়েছে আরও দুটি লোকসভা ভোট। কিন্তু বীরভূমে প্রার্থী বদলের কথা ভাবতে হয়নি শাসক দলকে। প্রত্যেকবার ব্যবধান বাড়িয়ে জয় এসেছে তৃণমূলের খাতায়। তবে তার পিছনে বড় হাত ছিল বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতির। তিনি হলেন অনুব্রত মন্ডল। পুলিশ, কমিশন থেকে বিরোধী সবাইকে নাকানি চোবানি খাইয়ে ভোটে জয় ছিনিয়ে আনাই ছিল কেষ্টর ক্যারিশ্মা।
তবে এই বারে সেই অঙ্কটা একটু আলাদা। কারণ এই ভোটে আর বীরভূমে তৃণমূলের রথ চালানোর জন্য সারথীর ভূমিকায় নেই তাদের কৃষ্ণ(কেষ্ট)। তিনি এখন তিহার জেলে বন্দি। যদিও স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি কেষ্টদার আর্শিবাদ নিয়েই সব কাজ হচ্ছে। আবার বীরভূমে বুকে প্রচার সভায় এসেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা গিয়েছিল সেই অনুব্রত নামই।
বীরভূমে অনুব্রতর প্রতাপের মতোই আবার একসময়ে খবরে ছিল তাঁর এবং শতাব্দীর গোষ্ঠী কোন্দল। তবে সেসব মিটিয়ে ভোটের ময়দানে অবশ্য এতদিন তৃণমূলকে জেতাতে একমাত্র ভরসা ছিলেন কেষ্ট। এই আসনে বিজেপির প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। বিজেপির প্রার্থী নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি। প্রথমে পদ্ম টিকিটে বীরভূমের প্রার্থী ছিলেন অবসর প্রাপ্ত আইপিএস অফিসার দেবাসিশ ধর। শীতলকুচি কান্ডে হিংসার ঘটনায় নাম জড়ানো পুলিশ কর্তা ভোটের আগে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই মতো প্রার্থীকে শুরু হয় দেদার প্রচার। তবে চাকরি ছাড়লেও রাজ্য সরকারের থেকে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র না মেলায় বাতিল হয়ে যায় প্রার্থীপদ। অবশ্য তা বুঝতে পেরেই দেবতনুকে দিয়ে আগে ভাগে মনোনয়ন জমা দিইয়ে রেখেছিল দল। তবে এই ধরনের ঘটনায় ঘটায় মুখ যে কিছুটা পুড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১৯ বীরভূমের তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ৪৫.৫১% ভোট, বিজেপির ঝুলিতে ছিল ৩৯.৩৩% ভোট। আর বাম-কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট মেলালে তা হয় ১১.৮৯%। বীরভূম লোকসভা আরও একটি বড় বিষয় সংখ্যা লঘু ভোট। গত বিধানসভায় ৮০হাজারের বেশি শতাব্দী জয় পেলেও তার প্রধান কারণ ছিল সেই সংখ্যা লঘু ভোট। কারণ ৭ বিধানসভা আসনের এই লোকসভায় ৪টি বিধানসভা থেকেই বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার পান ছিলেন এগিয়ে। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তিন বিধানসভা হাসন, নলহাটি এবং মুরারইতে এতটাই ভাল লিড পেয়েছিলেন যে শেষে জয় হয় তৃণমূল প্রার্থী।
সংখ্যালঘু ভোট পেতে এবার খানিকটা হলেও কাঁটা হতে পারেন জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ। একমাত্র সংখ্যালঘু প্রার্থী হওয়ায়, ভোট কাটাকুটিতে বিজেপির ফায়দা তোলার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও জয় নিয়ে এবারেও আশাবাদী শতাব্দী, বলেন এখানে মমতাদির নামে ভোট হয় আর আমি তিন বারে কী কাজ করেছি তা মানুষ ভালভাবে জানেন।