ভোটে জিতলে নতুন পালক! কোন রেকর্ড গড়তে চলেছেন ব্র্যান্ড মোদী?  

0 56

রাজনৈতিক মহলে তাঁকে অনেকে কটাক্ষ করে ‘চা-ওয়ালা’ বলেন। আবার তিনি নিজেকে বলেন ‘ফকির’। তিনি আর কেউ নন বরং নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। ভারতের ১৪ তম প্রধানমন্ত্রী। আর কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ করবেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় দফা। ভোটে জিতলে তৃতীয় বারের জন্য মসনদে বসবেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অবশ্য দাবি তিনিই বসবেন আবার মসনদে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এক সামান্য চা বিক্রেতা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাও আবার পর পর দুবার। এই বার জিতলে সেটা হতে চলেছে টানা ১৫ বছর।

তবে এই বার যদি মোদী ভোটে জেতেন তবে কি শুধুই তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি? আর কিছু নয়? না, বরং এই বার ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হলে এক নতুন রেকর্ড গড়তে চলেছেন মোদী বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। ইতিহাস বলছে মোদী যদি তৃতীয়বারের জন্য গদিতে বসেন তবে তিনি এক নজির গড়তে চলেছেন। যা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে অমলিন থাকবে চিরকাল।

স্বাধীনতার পর থেকে এখনও অবধি টানা তিন বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এই বিরল নজির থেকে এখন যেন কেবল এক পা দূরে দাঁড়িয়ে মোদী। নিন্দুকেরা বলবেন এ আর নতুন কী? তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী তো  ইন্দিরা গান্ধীও হয়েছেন। তবে ইন্দিরা গান্ধী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হলেও তা একটানা নয়। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ অবধি প্রধানমন্ত্রী থাকার পর, সেই আসনে বসেন মোরারজী দেশাই। তারপর আবার ১৯৮০ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ অবধি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে একটানা ১৫ বছর নয়।

এর আগে এই নজির রয়েছে একমাত্র দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর। এখনও অবধি তিনিই একমাত্র যে স্বাধীনতার পর থেকে একটানা ১৭ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নেহরু দেশের অন্যতম সফল রাজনীতিবিদ বলেও তরজা রয়েছে। কিন্তু এই বার যদি মোদী প্রধানমন্ত্রী হন তা হলে পন্ডিত নেহরুর মতোই তিনিও এই পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নজির গড়বেন।

কেবল পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী নয়, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেহরু জনপ্রিয়তা দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলন করা তাঁর বিবিধ প্রকপ্পের জন্যও। বিশষজ্ঞদের মতে বর্তমান ভারতের পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে নেহরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে গত দশ বছরের দিকে তাকালে বোঝা যায় সেদিক থেকে কিন্তু পিছিয়ে নেই মোদীও। জন ধন যোজনা, স্বচ্ছ ভারত, আয়ুষ্মান ভারত, মেক ইন ইন্ডিয়া, আত্মনির্ভর ভারত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, উজ্জলা যোজনা, অগ্নিপথ, ডিজটাল ইন্ডিয়ার মতো বহুল প্রকল্প নিয়ে এসেছে মোদী সরকার। যার মধ্যে একাধিক প্রকল্প মোদী সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন রাজনীতিকরা। যেমন ডিজিটালাইজেশনের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ইন্ডিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অগ্নিপথ প্রকল্প ইত্যাদি।

আবার নোটবন্দি বা জিএসটি এর একাধিক সিদ্ধান্ত যে ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বেশ প্রভাব ফেলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জাল নোট, সন্ত্রাসবাদ এবং বাজারে কালো টাকার রমরমা রুখতে রাতারাতি ঘোষণা করা নোটবন্দীতে আদপে কতটা লাভ হয়েছে জানা নেই। তবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানিকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা আক্রমণ শানাতে ছাড়েন না আজও। তেমন আরও এক সিদ্ধান্ত জিএসটি লাঘু করা। কংগ্রেস সরকারের অবশ্য দাবি জিএসটি লাঘু করায় অনেক গলদ রয়েছে। তাতে আখেরে অর্থনৈতিক ক্ষতিই হয়েছে।              

এই দশ বছরে বিদেশনীতি নিয়ে অন্যভাবে এগিয়েছে মোদী সরকার তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বিদেশ সফরে যে ভারতের সঙ্গে অনান্য দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে তা মেনে নেন কূটনীতিকদের অনেকেই। সম্প্রতি মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েনের সময়ে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। চীনপন্থী মহম্মদ মুইজ্জুর মন্ত্রীসভার তিন মন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমাজ মাধ্যমে অপমান করলে বয়কট মলদ্বীপের ঝড় ওঠে। তখন ভারতের পাশে দাঁড়ায় একাধিক দেশ।

তবে ভাল বা খারাপ সব মিলিয়েই নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী যে একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে খুব একটা দ্বিমত নেই। এমনকি কিছুদিন আগেও রাম মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মোদীর নানা তীর্থক্ষেত্রে  ভ্রমণ, ১১ দিনের কঠোর ব্রত পালন ও কৃচ্ছসাধন সেই ব্র্যান্ড মোদীর প্রচারের অংশ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তাই আপনি পছন্দ করুন বা অপছন্দ করুন কিন্তু বর্তমানে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়াটা বোধহয় একটু কঠিনই। এখন এই ব্র্যান্ড মোদী তৃতীয়বারের জন্য নিজের ম্যাজিক দেখাতে পারেন কি না সেটাই দেখার।   

Leave A Reply

Your email address will not be published.