Arunachal Pradesh : বড় বড় কালো দুই ফুটো, অদ্ভুত নাকের অধিকারী অরুণাচলের বিশেষ এই উপজাতি, কেন জানেন?

0 78

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সব থেকে বড় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ। সবুজে ঘেরা অরুণাচল প্রদেশ, যেখানে সব থেকে আগে সূর্যোদয় হয়। বৃহৎ সবুজ অরণ্যে ঘেরা অরুণাচল অনায়াসেই পর্যটকদের মন কাড়ে। পাহাড়, নদী, জলাভূমি, খেত সবমিলিয়ে অপূর্ব মায়াবী ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য।

একদিকে সবুজে ঘেরা বনভূমি, স্বচ্ছ পাহাড়ি নদীর কলতান, অন্যদিকে বরফে ঢাকা পর্বত ভূমি। ভৌগোলিক দিক থেকে তো বটেই, রাজনৈতিক দিক থেকেও অরুণাচলের গুরুত্ব কিছু কম নয়। কারণ ভারতের এই রাজ্যের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে পড়শি দেশ চিন। তাই সেনাবাহিনীর ভারী বুটের শব্দ, গোলাগুলি, অশান্তি এখানকার জীবনের অঙ্গ। তবু সেই সব কিছু ছাপিয়ে অরুণাচলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বার বার হাতছানি দেয় আমাদের। আজ এই প্রতিবেদনে থাকল অরুণাচলের তেমনই এক অদ্ভুত জায়গা, এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার খোঁজ।

অরুণাচলের সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় স্থান হল ‘জিরো ভ্যালি’। ‘জিরো ভ্যালি’ অরুণাচলের নিম্ন সুবনসিরি অঞ্চলে অবস্থিত। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের চূড়োয় সাদা মেঘে ধাকা উপত্যকা। এই দৃশ্যই যেন ‘জিরো ভ্যালি’র সৌন্দ্যর্যকে দ্বিগুণ করে দেয়। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়েই সেখানের মানুষের জীবন। প্রায় ২৬ প্রকারের জনজাতির বসবাস অরুণাচলে। তাঁদের প্রত্যেকের ভাষা ও জীবনশৈলি আলাদা আলাদা। এদের মধ্যেই একটি জনপ্রিয় জনজাতি হল অরুণাচলের ‘আপতানি’ উপজাতি।

অরুণাচলের বেশিরভাগ মানুষেই জীবিকা হিসেবে কৃষি কাজকে বেছে নিয়েছে। কৃষির মধ্যে ধান চাষই প্রধান। সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক এবং অভিনব পদ্ধতির সাথে এঁরা ধান চাষ করে।
ধান রোপন করার সময় সেখানে ছোট ছোট মাছের পোনা ছেরে দেওয়া হয় যাতে খেতের কীট-পতঙ্গের সংখ্যাও কমে আসে।

অনাবিল, আরম্ভরহীন জীবনযাপন ‘আপতানি’ উপজাতির মূল বৈশিষ্ট্য। এঁদের খাদ্যাভাস বড়ই সাস্থ্যকর। ভাত, সিদ্ধ করা সবুজ শাকসব্জি, সিদ্ধ মাংস ইত্যাদি নিত্য উপাদেয়। এর কোনোটি শুধুই নুন দিয়ে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়। অত্যাধিক মশলা ব্যাবহার করা হয় না। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছদ বড়ই আকর্ষণীয়। ‘আপতানি’ উপজাতিদের লক্ষনীয় বিষয় তাদের ‘ছিদ্রযুক্ত নাক’। যদিও এখন সময়ের সঙ্গে সেই প্রচলন কমে আসছে। তবুও আপতানি বয়স্ক মহিলাদেরই মধ্যেই এমন ছিদ্রযুক্ত নাক লক্ষ করা যায়। ‘ছিদ্রযুক্ত নাক’ বিষয়টি শুনে কিন্তু আবার সাধারণ নাকের ছিদ্রের কথা ভাববেন না। এক সময়ে ‘আপতানি’ মহিলাদের সৌন্দর্য্য খর্ব করার জন্য নাকের দু’পাশে বড় বড় দুটি বিশেষ ছিদ্র করে সেখানে কালো রঙের গোলাকৃতি এক বিশেষ ধরনের অলঙ্কার পরিয়ে দেওয়া হত। কথিত ‘আপতানি’ মহিলারা দেখতে খুব সুন্দরি, তাই অন্য উপজাতির পুরুষেরা তাঁদের বিয়ে করে নিতেন। ‘আপতানি’ ও অন্য উপজাতির মানুষ দেখতে অনেকটা এক হওয়ায় বোঝা মুশকিল ছিল কারা আসলে ‘আপতানি’! তাই ‘আপতানি’ মহিলাদের নাকে এমন ছিদ্র করে এক ধরনের কালো অলঙ্কার নাকে পরিয়ে দেওয়া হত। তাতে তাঁদের সৌন্দর্য্য কিছুটা হলেও কমে যেত। বাইরের উপজাতির হাত থেকে নিজেদের মহিলাকে রক্ষা করতেই নাকি এই পন্থা। যদিও এখন সেই প্রচলন অনেকটা কমে এসেছে।

মানুষ যে প্রকৃতির অংশ সেটা আমরা ভূলে গেলেও ভোলেনি অরুণাচলের মানুষ। তাই তাঁরা প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে এমন সুন্দর জীবন ধারন করে। প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি কাজ , বাঁশ-বেতের তৈরী ঘর-বাড়ি, নিয়মিত ভাবে অরণ্যের যত্ন নেওয়া, এসব তাঁদের আচরনের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। বনাঞ্চলে নিয়মিত গাছ রোপন করা পবিত্র বলে গন্য করা হয়। তাই হয়তো এমন সবুজ প্রকৃতির সাজ অরুণাচলের।

কী ভাবে যাবেন: অসমের গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে চেপে নাহারলাগুন স্টেশন পৌঁছতে হবে। নাহারলাগুন পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে ৭ ঘন্টা। সেখানথেকে সড়ক পথে আড়াই ঘন্টার পথ ‘জিরো ভ্যালি’। অথবা যদি হাতে সময় কম থাকে তা হলে অসমের গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় বা ইটানগর থেকে বিমান পথে পৌঁছতে পারেন ‘জিরো ভ্যালি’।

Leave A Reply

Your email address will not be published.