বাংলার সংস্কৃতি থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বিজেপিকে রুখতে মালদায় দাওয়াই মমতার

0 31

যত দিন যাচ্ছে ততই যেন বেড়ে চলেছে রাজনীতির পারদ। তৃতীয় দফা ভোটের আগে মঙ্গলবার রাজ্যে বিজেপির হয়ে সভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। SSC দুর্নীতি থেকে সন্দেশখালি কান্ড, বাংলায় হিন্দুদের বিপদ একই সুরে মমতা সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির দুই তারকা নেতা।

আর এই সব যখন হচ্ছে তখন সেই একই দিনে মালদায় জোড়া সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক ইঞ্চিও জমি না ছেড়ে মমতার আক্রমণ মোদী সরকারকে। নারী সুরক্ষা, থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা প্রসঙ্গে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা। জবাব দিয়েছেন যোগী-শাহের আক্রমণেরও।     

মমতা বলেন, ‘দিল্লির সরকার ১০ বছর ধরে বাংলাকে অবহেলা, বঞ্চনা করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আজ আপনাদের মতামত জানানোর দিন।’  বাংলার সংস্কৃতির  সঙ্গে বিজেপির মেলে না বলেও দাবি মমতার।

রাজ্য সরকারের প্রকল্পের কথা মনে করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপির নিশানা বাংলাকে বদনাম করা।  মালদহে দু’টি লোকসভা আসন রয়েছে। তৃণমূল জন্মের পর থেকে একটিতেও জয়লাভ করেনি। একটায় বিজেপি, একটায় কংগ্রেস জেতে। আমরা কি কাউকে বঞ্চিত করেছি? কেউ বলতে পারবেন যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান না। কন্যাশ্রী পান না? শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, সবুজশ্রী পান না? সবটাই ভাগ করে নিই আমরা। আমাদের ভেদাভেদ নেই।’

মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গেও মোদী সরকারকে খোঁচা মমতার, ‘দিল্লিতে পরিবর্তন দরকার। সেখানে হাজার টাকার গ্যাস। ঘরে ঘরে গ্যাস, কিন্তু তার এত দাম যে মানুষ ছুঁতে পারে না। সব ওষুধের দাম বেড়েছে। খোঁজ রাখেন? ডায়বেটিস, হার্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, সব ওষুধের দাম বেড়েছে। জিনিসের দাম এত বেড়েছে। সেই নিয়ে কি মোদীবাবু মাথা ঘামাচ্ছেন?  দিল্লিকে জিজ্ঞেস করুন। রমজানে আমরা সুফল দিয়ে কম দামে ফল বিক্রি করি। মা ক্যান্টিনে ৫ টাকায় ডাল, ভাত, তরকারি, ডিম দিই। ’

SSC মামলায় প্যানেল বাতিল নিয়েও বিজেপিকে নিশানা মমতার। তিনি বলেন, ‘আমরা যাঁদের চাকরি দিচ্ছি, তাঁদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। খেয়ে উল্লাসিত হয়ে বলছে, বোমা ফাটাব। আজ যাঁরা অন্যে চাকরি গেলে খুশি হন, তাঁরা কি ভাবেন, তাঁদের বাড়ির লোকের চাকরি গেলে কী হত?’

মালদার মঞ্চে এজেন্সি রাজনীতি নিয়ে সরব মমতা বলেন, ‘বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতে চায়। সব এজেন্সি কিনে নিয়েছে। বিচারের শেষ জায়গাও কিনতে চাইছে। এই অবস্থায় যদি বিজেপিকে না পাল্টান, সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি করে কিছু তৃণমূল এবং কিছু কংগ্রেসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন, ভারতবর্ষ বাঁচবে না।’

হিন্দুত্ব প্রসঙ্গেও বিজেপিকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা মমতার। তাঁর কথায়, ‘একটা হিন্দু ধর্মের আমদানি করেছে। ওরাই নাকি সব। আমরা যেন হিন্দু নই। এই তো দুর্গাপুজো আসছে। ইদ চলে গেল।এর পর পুজো। আমরা করি না? দুর্গা, শিব, সরস্বতী, রক্ষাকালী, শীতলার পুজো করি না? আমাদের হিন্দুধর্ম শেখাচ্ছেন?’

এমনকি গেরুয়া রঙ নিয়েও খোঁচা মমতার, ‘সাধুরা গেরুয়া পরে। আজ গেরুয়া পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোর ডাকাত, মাফিয়া। এদের মনুষ্যত্বের দাম রয়েছে? নেই।’

সভার মাঝেই আবার মহিলা অস্ত্রে শান দিয়েছেন মমতা। সুকৌশলে মনে করিয়ে দিয়েছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে  নাম লিখিয়েছেন? ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করেছি। বিজেপি বলেছে তিন মাস পর বন্ধ করব। আমি বলেছি, সাহস ভাল, দুঃসাহস ভাল না। বুঝবি, মায়ের ঝাণ্ডার কি দাম! যত দিন বেঁচে থাকবেন, পাবেন। ৬০ বছর পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডার-১ তার পরে লক্ষ্মীর ভান্ডার-২।’

আবারও মোদী সরকারকে শ্বেত পত্র বার করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল চোর, রোজ বলো। চুরি করল কোথায়? প্রমাণ দাও। ক্ষমতা থাকলে মোদী বাবু, শ্বেতপত্র বার করো।’

১০০ দিনের টাকা আটকানো নিয়ে আবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে তিনশো কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছো। কিছু বার করতে পারোনি। তা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করেছে। ১,৭৪,০০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছো।’

অমিত শাহের মেমারির সভা পালটা এই দিন মমতা বলেন ‘মোদীবাবুর বড় ত্রাতা অমিত বাবু মহাশয় মেমারিতে এসে বলে গেলেন, রাজ্য ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার হিসাব দেয়নি। আগের সভায় চাঁচোলে বলে এলাম, কোনও ইউটিলাইজেশন শংসাপত্র দেওয়া বাকি নেই। ক্ষমা চাইতে হবে, নয়তো জনগণের সামনে নাকে খৎ দিতে হবে।  সিএজি রিপোর্টে বলা রয়েছে, ৪.১ ধারায়, ৩২টি দফতর ৫২ হাজার কোটি টাকা ইউটিলাইজেশন শংসাপত্র দিতে পারেনি।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.