CJI DY Chandrachud on AI: সুপ্রিম কোর্টের বিচারের রায় কি দিচ্ছে AI? কলকাতায় কী বললেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়
‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! বর্তমানে সমাজে প্রায় অনেক পেশার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আইটি সেক্টর, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনের প্রচার, স্কুলে পড়াশোনার জন্য শিক্ষিকার ভূমিকায়, সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ পাঠিকার ভূমিকায়, অথবা নিসঃঙ্গ মানুষের একাকীত্ব কাটাতে সবেতেই যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে এআইয়ের প্রভাব। অনান্য ক্ষেত্রের মতোই সেই প্রভাব পড়েছে দেশের বিচারব্যবস্থাতেও। আদালতেও শুরু হয়েছে এআই-এর ব্যবহার। বিচার ব্যবস্থার নানা কাজ সহজে সম্পন্ন করতে ব্যবহার করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। তবে সেখানেই রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। তা হল সত্যি কী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা মানুষের বিকল্প হওয়া সম্ভব? যদি তাই হয় তাহলে বিশ্বের ক্রম বর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের কী হবে? কী তা প্রভাব ফেলবে চাকরির বাজারে? আবার আদালতে এর ব্যবহার শুরু হতেই আদালতের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বা নির্ভরযোগ্যতার উপরেও প্রশ্ন তুলেছেনে কেউ কেউ!
এই বার সেই নিয়ে নিজের মত জানালেন খোদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আদালতে কার্যকলাপে এআইয়ের প্রভাব কী? তা কীভাবেই বা বিচারব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে পারেন জানালেন তিনি।
একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার কলকাতায় এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। কলকাতা হাইকোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষ। তাই সেই উপলক্ষ্যে শনিবার একটি আলোচনা সভার আয়জন করা হয়। সেখানে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির সেই আলোচনা চক্রে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিচারব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন। ‘সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পরীক্ষামূলকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমাকে সব সময় জিজ্ঞেস করা হয় বিচারের কাজে কী ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়?’
এর পরেই তিনি জানান কোনওভাবেই কোনও মামলার রায় দেওয়ার জন্য এআইয়ের ব্যবহার করা হয়না। আমি তার পক্ষপাতি নই। কিন্তু নানা ‘টেকনিক্যাল’ কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যেতে পারে। চন্দ্রচূড়ের ভাষায়, ‘২৪ বছর বিচাপতি হিসাবে কাটানোর পরে আমি কখনই চাই না কোনও মেশিন চালিত রোবট আমার হয়ে মামলার রায় দিয়ে দিক। কারণ হতে পারে রোবট কোনও অঙ্ক কষে একটা নির্ভুল উত্তর দিতে পারে, কিন্তু যে সহমর্মিতা, সহানুভূতি একজন বিচারকের থাকে তা কখনই একটি রোবটের মধ্যে থাকে না। যদিও কিছু ক্ষেত্রে কোনও কোনও রোবটে অনুভূতি থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে যে তাকে বানিয়েছেন তাঁর ব্যাক্তিগত স্বভাবের উপরে। তা পক্ষপাতহীন নয়।’
কিন্তু তা হলে কোন কাজে সুপ্রিম কোর্টে ব্যবহার করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। প্রধান বিচারপতি জানাচ্ছেন কেসের ক্যাটাগরি নিশ্চিত করা থেকে কোনও রকম টেকনিক্যাল ভুল নির্বাচন করার মত কাজে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয় এআই। তিনি বলেন, ‘আমরা এআই ব্যবহার করি সম্পূর্ণ অন্য আঙ্গিকে। অনেক সময় আদালতে যে সব মামলা রুজু হয় তার মধ্যে অনেক ‘হাই প্রোফাইল’ কেস থাকে। এই ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা সর্বদা তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে সেই মামলাটিকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ করে নেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মামলার তারিখ পিছতে থাকে। আমরা এই ক্ষেত্রে তাই যতটা সম্ভব মানুষের হস্তক্ষেপ কমাতে চাই। অনেক সময় অনেক কেসে কাগজপত্র ঠিক থাকে না বা অনান্য টেকনিক্যাল ভুল থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। ফলে আদালতের সময় নষ্ট কম হবে।’
আবার রুজু মামলাগুলি কোন বিভাগের তা চিহ্নিত করতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন মামলা কে শুনবেন তা ঠিক হয় সেই মামলাটি কোন বিভাগের তার উপরে। তাই তা যদি আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া যায় তা হলে কাজের সুবিধা হয়। এই বিচারপতি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে কোনও কেস এলে তা কোন ক্যাটাগরির কেস তা দেখা হয়। সেই অনুযায়ী কোন বিচারপতি তা শুনবেন তা নির্ধারণ করা হয়। এই বার কোনও উকিল যদি মামলাটি কোন বিভাগের তার ভুল ব্যাখা দেন তা হলে তা অন্য বিচারকের কাছে চলে যায়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আমরা তা সহজেই দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারণ করতে পারি।’ প্রসঙ্গত, এর সঙ্গেই এই দিন বিচারব্যবস্থার আরও একটি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ তথা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলকে সতর্ক করেছেন চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন আদালতকে মন্দির এবং বিচারককে ভগবান ভাবাটাও ভুল। তাঁর কথায়, ‘জনতা বলে, আদালত ন্যায় এবং বিচারের মন্দির। আমরা নিজেদেরকে সেই মন্দিরের দেবতা ভেবে ভুল করি। এটা খুব বিপদের। আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমার সামনে আদালতকে কেউ মন্দির বললে আমি তাঁদের বাধা দিই। মন্দির বললেই মনে হয় বিচারকেরা দেবতা। আমি মনে করি বিচারকরা মানুষের সেবক। বিচারকেরা বিচার করুন, কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভূতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা মানুষ। বিচারপতিরা যেন সমাজের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করেন। বিচার করতে হবে সমাজকে নিয়ে সংবিধান মাথায় রেখে।’