‘নিট’ কান্ডের পরেই ‘নেট’ দুর্নীতি। আবারও প্রশ্নের মুখে এনটিএ বা ন্যাশানাল টেস্টিং এজেন্সি। পরীক্ষা নেওয়ার একদিন পরেই ‘নেট’ বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। গবেষণা বা কলেজের অ্যাসিটান্ট প্রফেসরের জন্য যোগ্যতা নির্নায়ক পরীক্ষা, ‘নেট’ বা ন্যাশানাল এলিজিবিটি টেস্ট(NET)। মূলত পরীক্ষায় কিছু বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বাতিল করা হয়েছে। তারপরেই বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচীব গোবিন্দ জয়সওয়াল। নেট দুর্নীতির তদন্তের দায়ভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘অপরাধীরা কেউ পার পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্যই সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে। নেট পরীক্ষায় যদি কোনও বেনিয়ম হয়ে থাকে, তা হলে ব্যবস্থা নিতে কোনও রকম দ্বিধা করব না আমরা।’
বুধবার সমগ্র দেশে নেট পরীক্ষা বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’ নিয়ে দুর্নীতি। সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে সুওরিম কোর্টে। ইতিমধ্যেই ১৫৬৩ জনের পরীক্ষা বাতিল করেছিল এনটিএ। তাঁদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তারপর পরীক্ষা নেওয়ার একদিনের মধ্যে তা বতিল করায় দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে হইচই। সরকারকে এই নিয়ে নিশানা করেছে বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠেছে তবে কি ‘নিট’-এর মতো ‘নেট’ পরীক্ষার প্রশ্ন আগে থেকে ফাঁস হয়েছে?
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব গোবিন্দ জানান, ‘‘‘১৮ জুন এনটিএ যে ইউজিসি-নেট পরীক্ষা নিয়েছিল, তাতে ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রকের মনে হয়েছে, এই পরীক্ষায় বেনিয়মের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মন্ত্রক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি সিবিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার ১৮ জুন সারা দেশে ‘নেট’ পরীক্ষা হয়েছিল। প্রায় ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। সূত্রের খবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সাইবার ক্রাইম বিভাগের জাতীয় সাইবার ক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটিক্স ইউনিট থেকে পাওয়া কিছু সূত্রের ভিত্তিতে পরীক্ষা বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রক। সেই তথ্যের মাধ্যমে নাকি অসঙ্গতির বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রকের। তারপরেই এনটিএকে পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রক।
শিক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি এই দিন বলেন, ‘১৯ জুন আমরা অসঙ্গতির তথ্য পেয়েছিলাম। এরপর আমরা নেট পরীক্ষা বাতিল করি। সিবিআই তদন্ত করছে, অপরাধীরা পার পাবে না। অনিয়মের আশঙ্কায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অনলাইনে যোগাযোগ থেকে কিছু ইনপুট এসেছে। প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।কেউ অভিযোগ করেনি, এজেন্সি ব্যবস্থা নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না। তদন্ত চলছে বলে আমরা বিশদে কিছু জানাচ্ছি না। এনটিএ-র নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে এবং অনেক অংশীদার রয়েছে। পুরো বিষয়টিই তদন্তাধীন।’
এই আবহেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে নতুন পরীক্ষার দিনক্ষণ নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন পরীক্ষার দিন ঘোষণা হবে না? তবে ফের পরীক্ষা কবে হবে, কয়েকদিনের মধ্যেই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন গোবিন্দ।
প্রসঙ্গত, এই বছর জুন মাস থেকেই ‘নেট’ পরীক্ষার নিয়মে পরিবর্তন করে এনটিএ। এতদিন কম্পিউটারে পরীক্ষা হত। একটি প্রশ্নের চারটি উত্তর থাকতো, তার মধ্যে থেকে য কোনও একটি বেছে নিতে হত। কিন্তু সেই নিয়ম বদলে এই বছর জুন থেকেই ওএমআর শিট নিয়ে আসে এনটিএ। কেন নিয়মের এই বদল? তা নিয়েও কিছু বলেনি এনটিএ।