নিউজ ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর : কেটে গিয়েছে দীপাবলি। এসে গেল ভাই বোনের উৎসব (ভাইফোঁটা)। ভাইদের মঙ্গল কামনায় ঘরে ঘরে উৎসব। বন্ধন আরও দৃঢ় করার বার্ষিক আচার। দই, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে সারাবছর, সারাজীবন ভাইদের মঙ্গল কামনা দিদি, বোনেদের। বছরভর খুনসুটি থাকলেও আজকের দিনে ‘আড়ি’তেই ভাব।
এই তিথিকে যম দ্বিতীয়া বা ‘ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া’ও বলা হয়ে থাকে। চলতি বছর ভাইফোঁটা পড়েছে দু’দিন । তাই দ্বিতীয়া তিথি অনুযায়ী, অনেকেই ভাইফোঁটা সেরে ফেলেছেন মঙ্গলবার। আজ, অর্থাৎ, বুধবারও কিন্তু ফোঁটা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতে আজই ভাইফোঁটা পালন করা হচ্ছে। ১৪ নভেম্বর দুপুর ২টা বেজে ৩৬ মিনিট থেকে শুরু হবে এবং ১৫ নভেম্বর দুপুর ১টা বেজে ৪৭ মিনিটে শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয়া।
ফোঁটা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মবিধি রয়েছে। যেমন কী কী উপচার রাখতে হবে, কী মন্ত্র বলতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেগুলি একটু দেখে নেওয়া যাক।
থাকবে চন্দন, মধু, দধি, ধান, দুর্বা, ধূপ, দীপ এবং মিষ্টি। ধূপ দীপ জ্বেলে দিতে হবে। ছোট ভাই হলে তার মাথায় ধান দুর্বা দিয়ে দিদি আশীর্বাদ করবে। বড় ভাই হলে আশীর্বাদ নয়, শুধু কপালে ফোঁটা। ফোঁটা শুধু চন্দনের হতে পারে, দইয়ের হতে পারে। তিলকদানের জন্য ব্যবহার করতে হয় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল। তিলকদানের সময় কোনও গম্ভীর সংস্কৃত মন্ত্র নয়। একেবারেই দেশজ একটি ছড়া। বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার সময়ে বলবে-
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥” তিন বার একই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। এ সব হয়ে গেলে ভাইয়ের সামনে ধরে দিতে হবে মিষ্টির প্লেট।
এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে। এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের কল্যাণ প্রার্থনা করে।
ভাইফোঁটার পৌরানিক মহত্ব হল, এই বিশেষ দিনে বা তিথিতে যম তাঁর বোন যমুনার বাড়ি গিয়েছিলেন। সেদিন বোনের বাড়ি খুব তৃপ্তি করে যমুনার হাতের রান্না করা খাবার খান মৃত্যুদেবতা যম। খেয়ে খুবই খুশি হন তিনি। তখন বোন যমুনা তাঁর দাদার কাছে আশীর্বাদ চান। বোনকে আশীর্বাদ করে যমরাজ সেদিন বলেছিলেন, যে ভাই এই বিশেষ তিথিতে তাঁর বোনের বাড়ি গিয়ে বোনের হাতের রান্না গ্রহণ করবেন, তাঁর অকালমৃত্যুর ভয় থাকবে না। এই ঘটনার পর থেকেই দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে বলে শোনা যায়। শাস্ত্রমতে, বিশেষ এই তিথি ‘যম দ্বিতীয়া’ নামে পরিচিত।