বক্সী বাড়ির ঝুলনে ফুটে উঠল কলকাতার ইতিকথা

0 93

উনবিংশ শতকে কলকাতায় হুজুক উঠলেই রূপচাঁদ গান বাঁধতেন। সেই রূপচাঁদ গান হতো রেল, বিধবা বিবাহ, কন্যাদান এইসব বিষয় নিয়ে। সেই গান শহর জুড়ে তোলপাড় চলত। সেই গানে মিশে থাকত ইংরাজী শব্দও। এই রকমই একটি দল ছিল রূপচাঁদের।
রূপচাঁদ পক্ষী মনে করতেন তিনি নাকি উড়েও যেতে পারেন! তাই খাঁচায় করে আসতেন। গায়ে পাখির বেশভূষা। হাতে গাঁজার কল্কে। সেই রূপচাঁদের অবয়বকেই এবার মাটি, রঙ দিয়ে তুলে ধরা হল বরানগর বক্সী বাড়ির ঝুলনে। তাঁর পক্ষীর বেশ, হাতে গাঁজার কল্কে, সঙ্গে সঙ্গীদের টেনে নিয়ে আসা গড়ুর গাড়ির মত একটি গাড়িতে খাঁচাটি। এই মডেলটি বরানগর বক্সী বাড়ির ঝুলনের এবারের অন্যতম আকর্ষণ।
এই ঝুলনের এবারের ভাবনা ‘পুরনো কলকাতার ইতিকথা।’ গত কয়েক শতকের পুরনো কলকাতার কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বড়নগরের ব্ক্সী বাড়ির সদস্যরা ।রূপচাঁদ ছাড়াও রাখা হয়েছে ভিক্টোরিয়া, কালীঘাট মন্দির, চড়ক, কবিগানের লড়াই। এমনকি পাথুরিয়াঘাটার মল্লিকদের শখের জেব্রা গাড়ির মডেলও দেখতে পাওয়া গেল এই ঝুলনে। গতবার তিনশো পুতুলের ঝুলন করেছিল বরাহনগরের বকশি বাড়ি। কিন্তু এবার তিনশো পুতুল রাখা হয়নি পুরনো কলকাতাকে তুলে ধরার জন্য।

ভিস্তিওয়ালার মডেল দেখে মনে হয় প্রাচীন কলকাতার কোন এক প্রেক্ষাপট।শহরের গোধূলিতে রাস্তা দিয়ে টুং টুং শব্দে যাত্রী নিয়ে টানা রিক্সার চলে যাওয়াও মতো কিংবা ওই দূরে বটগাছের নীচে কচিকাঁচাদের বায়োস্কোপ দেখার ভিড়ের দৃশ্য এই ঝুলনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর বেয়ারাদের বয়ে নিয়ে যাওয়া সুন্দর পালকিটা দেখে কানে এসে পৌঁছালো সেই ‘হুন না হুন না পালকি চলে হুননা’ শব্দগুলো। পুরনো কলকাতার চাঁদপাল ঘাটে দাঁড়ালে যেরকম পালতোলা জাহাজের সাড়ি দেখা মিলত ,, সেই পালতোলা জাহাজও তুলে ধরা হয়েছে। এসবের পাশে চড়কের দৃশ্যটা সত্যি চোখে পড়ার মতো। এসবের পাশে কবি গানের লড়াইয়ের আসরটা দেখে মনে পড়বে ভোলা ময়রা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির কথা। আর রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের ঝুলন যাত্রার একাধিক মডেল।

ঝুলন সাজিয়ে রূপ দিয়েছেন বকশি বাড়ির দেবশ্রী বক্সী ও মৃণাল বক্সী সহ অন্যান্য সদস্যরা
Leave A Reply

Your email address will not be published.