চোখের জলে ঝন্টুকে বিদায় তেহট্টবাসীর

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ এপ্রিল: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ মানুষ। তারই রেশ না কাটতেই উধমপুরে শুরু হয় সেনা ও জঙ্গিদের মধ্যে ভয়াবহ গুলির লড়াই। সেই সংঘর্ষেই শহিদ হন বাংলার গর্ব, নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার সন্তান, বীর জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ।

গত বৃহস্পতিবার আসে সেই মর্মান্তিক খবর—যে সংবাদ এক নিমেষে ভেঙে দেয় পরিবারের স্বপ্ন, স্তব্ধ করে দেয় গোটা গ্রামকে। শুক্রবার রাতে শহিদের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাকপুর সেনা ছাউনিতে, যেখানে গর্বভরে তাঁকে দেওয়া হয় গানের স্যালুট—জাতির শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার নিঃশব্দ অভিব্যক্তি।

শনিবার সকালে পাথরঘাটার নিজ গ্রামে এসে পৌঁছয় শহিদ ঝন্টু আলি শেখের কফিনবন্দি দেহ। তার আগেই বাড়ির সামনে মানুষের ঢল—ভিড়ে উপচে পড়ছে গোটা এলাকা। সবার কণ্ঠে একটাই স্লোগান—‘ভারত মাতার জয়’।

কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা। আর মা—চোখের জল যেন কিছুতেই থামছে না। কোলে করে যে ছেলেকে বড় করেছিলেন, পিঠে চড়িয়ে যাকে মানুষ করেছিলেন, সেই সন্তান আজ নিথর হয়ে ফিরেছে। এই যন্ত্রণায় দু’জনের মুখে শুধুই নিঃশব্দ আর্তনাদ—এ যেন এক সঙ্গে গর্ব আর চিরন্তন শোকের প্রতিচ্ছবি।

২০০৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ঝন্টু আলি শেখ। দায়িত্বের মাঝেই গড়ে তুলেছিলেন নিজের ছোট সংসার—স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখের পরিবার। বছর দেড়েক আগে তাঁর পোস্টিং হয় কাশ্মীরে, আর তাই পরিবারসহ তিনিও সেখানেই থাকতেন। সুযোগ পেলেই ছুটিতে ফিরে আসতেন পাথরঘাটার গ্রামে, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে সময় কাটাতে।

গত ফেব্রুয়ারিতেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন তিনি। হাসিমুখে কাটানো সেই ক’টা দিন ছিল যেন একটুকরো শান্তি। কেউ জানত না, সেটাই হবে তাঁর শেষবার ফেরা—এরপর আর ফিরবেন না জীবন্ত ঝন্টু।

এবার ফিরলেন কফিনে শায়িত হয়ে। গ্রামের ছেলে ফিরলেন, কিন্তু আর কোনো কথা নেই, কোনো হাঁসি নেই—শুধু নিথর দেহ আর ভাঙা হৃদয়ের কান্না। এই দৃশ্য কল্পনাও করেননি গ্রামের মানুষজন, আজ সবাই শোকস্তব্ধ, নির্বাক।

ঝন্টুর দাদাও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ভাইয়ের কফিনবন্দি দেহ কাঁধে তুলে তিনি নিজেই নিয়ে আসেন।

Comments are closed.