ডিজিটাল ডেস্ক, ২৩ এপ্রিল: পহেলগাঁওয়ে আসা পর্যটকদের টাট্টু ঘোড়ায় চড়ানোই ছিল সইদ আদিল হুসেন শাহের জীবিকা। সারা বছর সেই কাজ করেই পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেন স্থানীয় বাসিন্দা সইদ। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারানো ২৬ জনের তালিকায় জায়গা হল তাঁরও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জঙ্গিদের হামলার সময় অন্যদের বাঁচাতে সাহসিকতার সঙ্গে এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সইদ। কিন্তু সেই বীরত্বই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হামলার সময় একমাত্র সইদ-ই ছিলেন, যিনি সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। নিজের প্রাণ দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেককে। আজ তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে গোটা পহেলগাঁও।
মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরন উপত্যকায় ঘুরছিলেন একদল পর্যটক। হঠাৎই তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় গুলির বৃষ্টি। একে একে পর্যটকদের লক্ষ করে গুলি ছুড়তে শুরু করে তারা।
ঠিক সেই সময়ই সাহসিকতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে আসেন স্থানীয় ঘোড়সওয়ার যুবক সইদ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, আতঙ্কের মাঝে তিনি চেষ্টা করেছিলেন এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিতে, বাকিদের বাঁচানোর জন্য। কিন্তু সফল হতে পারেননি। জঙ্গির গুলিতে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সইদের। তাঁর এই আত্মবলিদান এখন গোটা উপত্যকার গর্বের প্রতীক।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন সইদ। তাঁর রোজগারেই চলত সংসার—বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং ছোট ছোট সন্তানদের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। কিন্তু জঙ্গি হামলায় সইদের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।
শোকে স্তব্ধ সইদের বাবা-মা ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের একটাই দাবি—এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের যেন দ্রুত কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিনজন বাসিন্দাও। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। হামলার পর রাতেই এর দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে উপত্যকায় পৌঁছেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র বিশেষ দল। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। বুধবার সকালে তিনি নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সমবেদনা প্রকাশ করেন।
Comments are closed.