ডিজিটাল ডেস্ক, ২৩ এপ্রিল: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন পশ্চিমবঙ্গের তিন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে দু’জন কলকাতার, আর একজন পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা। তিন জনই পরিবারসহ কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন, খুশির মুহূর্তই হঠাৎ বদলে গেল ভয়ঙ্কর দুঃখে।
বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ দিন কয়েক আগে পরিবারসহ কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বুধবারই তাঁদের কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেই ফেরা আর হল না। জঙ্গিদের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারান কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সমীর। এখন স্বামীকে ছাড়াই কলকাতায় ফিরতে হচ্ছে তাঁর স্ত্রী শবরীকে।
একই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারীর। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী সোহিনী ও সন্তানকে নিয়ে পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় হাসিমুখে ঘুরে বেড়িয়েছেন, পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে ফোনেও কথা বলেছেন। অথচ মাত্র ঘণ্টাখানেক পরেই সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়—সেই আনন্দের মুহূর্ত মিলিয়ে যায় এক ভয়ানক ট্র্যাজেডিতে।
কর্মসূত্রে বিতান অধিকারী থাকতেন ফ্লরিডায়, একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সোহিনীও থাকেন সেখানে। গত ৮ এপ্রিল তাঁরা তিন বছরের ছেলে হৃদানকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। ১৬ এপ্রিল পরিবারের তিন সদস্য কাশ্মীর বেড়াতে যান। সব ঠিকঠাক থাকলে বৃহস্পতিবার তাঁদের ফেরার কথা ছিল কলকাতায়। কিন্তু তার আগেই, মঙ্গলবার বাড়িতে পৌঁছায় মর্মান্তিক দুঃসংবাদ।
পাশাপাশি জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্র। যদিও তিনি কর্মসূত্রে থাকতেন হায়দরাবাদে এবং কর্মরত ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবিতে। আগে ছিলেন রাঁচীতে, সেখান থেকে সম্প্রতি বদলি হয়ে যান হায়দরাবাদে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন মণীশ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ এপ্রিল পরিকল্পনামাফিক হায়দরাবাদ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে অযোধ্যা রওনা দেন মণীশরঞ্জন। এরপর হরিদ্বার হয়ে পৌঁছোন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে। পরিকল্পনা ছিল সেখান থেকে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার। বৈষ্ণোদেবীতে মণীশের বাবা-মা ও ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে ঘোরার কথা ছিল তাঁদের।
সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার ঝালদার বাড়ি থেকে মণীশের পরিবারও রওনা দেয় বৈষ্ণোদেবীর দিকে। কিন্তু পথে, ডালটনগঞ্জ পৌঁছোনোর পরই তাঁদের ফোনে আসে দুঃসংবাদ—পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মণীশের মৃত্যু হয়েছে। মুহূর্তেই সব কিছু থমকে যায়। বৈষ্ণোদেবী না গিয়েই শোকস্তব্ধ পরিবার ফিরে আসে ঝালদায়।
Comments are closed.