ডিজিটাল ডেস্ক, ২২ এপ্রিল: দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের আমন্ত্রণে এটি তাঁর তৃতীয় সফর সৌদি আরবে। সূত্রের খবর, এই সফরে অপরিশোধিত তেল ও রিফাইনারি প্রকল্পে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। পাশাপাশি অন্তত ছ’টি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও হজ যাত্রীদের কোটা-সহ তীর্থযাত্রা সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
মোদি সরকারের আমলে সৌদি আরবসহ গোটা পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই ভারত-সৌদি বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সৌদি সফরে রওনা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ লেখেন, “সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হচ্ছি। সেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেব। ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। গত এক দশকে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমি মুখিয়ে রয়েছি। পাশাপাশি, সৌদিতে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করব।”
সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌদি সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তিগুলি মূলত জ্বালানি, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও গবেষণা, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তি খাতকে ঘিরে। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও একটি মউ সাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সৌদি আরব ভারতের অন্যতম প্রধান অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। মোদির সফরে রিয়াধ ভারতের জন্য তেল রপ্তানিতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা করতে পারে বলে খবর। কারণ, চীনের অর্থনৈতিক মন্দা এবং বৈদ্যুতিন গাড়ির বাড়বাড়ন্তের কারণে সৌদির তেল রপ্তানি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। সেই ঘাটতি ভারতীয় বাজারের মাধ্যমে পূরণ করতে আগ্রহী তারা।
জানা যাচ্ছে, সৌদি আরব পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের তিনটি বড় তৈল শোধনাগারে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, যা দুই দেশের জ্বালানি সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে পারে।
এর পাশাপাশি হজযাত্রা নিয়েও সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা হতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৪ সালে ভারতের হজ কোটা ছিল ১,৩৬,০২০ জন, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৫,০২৫ জনে। এর মধ্যে ১,২২,৫১৮ জন হজযাত্রীর জন্য থাকার ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে, হজ গ্রুপ অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তিতে বিলম্বের কারণে প্রায় ৪২ হাজার যাত্রী এবারের হজে যেতে না-ও পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার, বিশেষ করে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক, এই বিষয়টিকে বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং গোটা প্রক্রিয়ার আয়োজনের দায়িত্বও তারাই পালন করে থাকে। হজ সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মোদির সৌদি সফরে আলোচনার এক প্রধান অঙ্গ হতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
Comments are closed.