রাতভর উত্তেজনা এপিসি ভবনের সামনে, চাকরিহারাদের আন্দোলনে বিজেপি, জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট

7

রাত যত বাড়ল ততই বাড়ল চাকরিজীবীদের আন্দোলনের ঝাঁঝ। দিনভর আন্দোলনের পর মাঝরাতে ফুঁসে উঠলেন আন্দোলনকারীরা । এরই মধ‍্যে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বচসা চাকরিহারাদের । রিভিউ পিটিশনের আগে বেরোবে না তালিকা, জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যোগ‍্যদের বেতন দেওয়া হবে বলে বার্তা ব্রাত‍্যর। চাকরিহারাদের প্রশ্ন , যোগ‍্য অযোগ‍্য ফারাক না করতে পারলে কিভাবে আনটেন্টেড (যোগ‍্যদের) বেতন দেবে সরকার? তালিকা প্রকাশ যখন সম্ভব নয় তখন কী অযোগ‍্যদেরও বেতন দেবে সরকার ? প্রশ্ন চাকরিজীবীদের ।

মাঝরাতে চাকরিজীবীদের সমর্থনে এসএসসি ভবনের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন মেডিক‍্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও । তারা চাকরিহারাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে খাবার ও জল বিতরণ করেন। বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ‍্যায় মাঝ রাতে চাকরিহারাদের এসএসসি ভবনের সামনে থেকে রাস্তা না ছাড়ার বার্তা দেন । অভিজিৎ বলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে তালিকা প্রকাশ না করার কোনও সম্পর্ক নেই । এর পরই প্রাক্তন বিচারপতি চাকরিজীবীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন । রাত যত বাড়ল চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তাতেই এসএসসি ভবনের সামনে কাগজ পেতে সুয়ে পড়েন । রাত ২ বেজে ২০ মিনিট নাগাদ এক গাড়ি জল নিয়ে বিক্ষোভকারীদের মাঝে পৌঁছলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। সজল বলেন,  তালিকা প্রকাশ করলে অনেক তৃণমূল নেতার অবস্থা ছাল ছাড়ানো মুর্গির মত হয়ে যাবে। পাশাপাশি জল ও খাবার নিয়ে আন্দোলনকারী চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রান্ট । 

জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিষ হালদারকেও দেখা যায় এসএসসি ভবনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ।  এসএসসি ভবনের সামনে থেকে করুনাময়ী ও উইপ্রো মোড়ের রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ । 

 সোমবার সন্ধে ৭টার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে এপিসি ভবনের সামনে। তালিকা প্রকাশের দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিহারারা । এর আগে ১৩ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত‍্য বসু চাকরি হারানোর সঙ্গে বৈঠকের পর আশ্বাস দেন যোগ‍্য অযোগ‍্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে । তবে ঘড়ির কাঁটা রাত ৯টা পেরিয়ে গেলেও এসএসসি ভবন থেকে তালিকা প্রকাশ করা হয়নি । চাকরিহারারা ঘোষনা করেন তারা এবার ফাইনাল ম‍্যাচ খেলতে নেমেছেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন তালিকা প্রকাশ না করলে তারা এপিসি ভবন ঘেরাও করে রাখবেন । এসএসসি চেয়ারম্যান সহ কোনও আধিকারিকদের তাঁরা বেরোতে দেবেন না । এরপরই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এপিসি ভবনের সামনে । পুলিশ গার্ড রেল দিয়ে এপিসি ভবনের মেন গেট ঘিরি ফেলে । বাইরে চাকরিপ্রার্থীরা তাদের ঘেরাও চালিয়ে যায় । রাত ১১ টা পেরিয়ে গেলেও তালিকা প্রকাশ নিয়ে এসএসসির তরফে কোনও বার্তাই এল না । রাত যত বাড়ল ততই চাকরিজীবীদের তালিকা প্রকাশের পক্ষে দাবি আরও জোরালো হতে থাকে। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয় চাকরিহারাদের । গার্ড রেল ভেঙে এপিসি ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। 

ঘড়ির কাঁটায়  রাত ১২ টা। এপিসি ভবনে ঘেরাও হয়ে রয়েছেন এসএসসি চেয়ারম‍্যান ও আধিকারিকরা। চেয়ারম‍্যনানের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, যারা কাজ করেছেন তারা বেতন পাবেন। ২০১৬ এর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে খুব স্পষ্ট স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।। সুপ্রিম কোর্ট গাইড লাইন মেনেই চলবে কমিশন ।

এর পরেই চাকরিহারাদের আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়ল । তালিকা প্রকাশ করতেই হবে , নিজেদের দাবিতেই অনড় রইলেন চাকরিহারারা। আন্দোলনকারীরা গার্ড রেল ভেঙে এপিসি ভবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে আরও একদফা বচসা বাঁধে পুলিশের সঙ্গে। এর পরেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত‍্য বসু সংবাদমাধ‍্যমে জানিয়ে দেন , সুপ্রিম কোর্ট বললেই  তালিকা প্রকাশ করা হবে । রিভিউ পিটিশনের আগে বেরোবে না তালিকা, জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যোগ‍্যদের বেতন দেওয়া হবে বলে বার্তা ব্রাত‍্যর। আন্দোলনকারীদের পাল্টা দাবি তাহলে কেন এর আগে তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী । এপিসি কলেজের সামনেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চাকরিহারারা। যতদিন না তাদের যো চাকরি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে ততদিন তারা রাস্তা ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন চাকরিহারারা। এর পরেই আবারও একবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এপিসি ভবন চত্ত্বর পুলিশের সঙ্গে রিতীমত হাতাহাতি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের । একজন পুলিশকর্মীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখ্তে থাকেন চাকরিহারারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামেন ডিসিপি অনিশ সরকার । আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথাশিল্পীর চেষ্টা করলে মারমুখী হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সামাল দিতে আরও ফোর্স ডাকতে বাধ‍্য হয় পুলিশ। দীর্ঘ ধস্তাধস্তির পর ঘেরাও হওয়া পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ । পরে ডিসিপি অনিশ সরকার জানান , একজন পুলিশকর্মী এপিসি ভবনে তার ডিউটি শেষ করে বেরোচ্ছিলেন। তিনি পুলিশের ইউনিফর্মে ছিলেন না। সিভিল ড্রেসে ছিলেন। তাকে কমিশনের আধিকারিক ভেবে আন্দোলনকারীকে ঘেরাও করে। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন পুলিশকর্মীদের তাঁরা আটকাবেন না। তবে কমিশনের কোনও আধিকারিককে তাঁরা এপিসি ভবন থেকে বেরোতে দেবেন না । তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত তাঁরা ঘেরাও চালিয়ে যাবেন । 

ঘেরাও পুলিশকর্মীকে উদ্ধারের পর এবার আন্দোলনকারীরা ডিসিপি অনিশ সরকার ও তার টিমকে ঘিরে ফেলেন । তাঁদের এপিসি ভবনে প্রবেশ করতে বাধা দেন চাকরিহারারা। বাধ‍্য হয়েই পুলিশকে বলপূর্বক এপিসি ভবনে ঢুকতে হয় । এদিকে ঝাঁঝ বাড়তে শুরু করে আন্দোলনের । আন্দোলনের স্লোগান ক্রমশ তালিকা প্রকাশের দাবি থেকে সরকার,  পরে মমতার বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকে। হ‍্যান্ডমাইক নিয়ে মমতার নাম নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা । মমতাকে হিরক রাণী বলে  হায় হায় স্লোগান ওঠে এপিসি ভবনের সামনে । ধিক্কার স্লোগানে ছয়লাপ গোটা এপিসি ভবন চত্ত্বর। এর পর পুলিশের সামনেই  মুখ‍্যমন্ত্রীকে নির্মমতা বলে স্লোগান তোলেন আন্দোলনকারীরা  । পুলিসের সামনেই চোর মমতা হায় হায় স্লোগান তুলতে থাকেন চাকরিহীরারা। পুলিশকে আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আবেদনও করা হয়  চাকরিহারাদের পক্ষ থেকে । মমতা চাকরি চোর , মমতা মেধা চোর স্লোগান উঠতে থাকে আন্দোলন থেকে। এরপরই ডিসিপি অনিশ সরকার তার ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে যান এপিসি ভবনের সামনে থেকে । সংবাদমাধ‍্যমের তরফে তার কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলে নি। রাত যত বাড়তে থাকে আন্দোলনের ঝাঁঝ ততই বাড়তে থাকে। মাঝরাতে চাকরিজীবীদের সমর্থনে এসএসসি ভবনের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন মেডিক‍্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও । তারা চাকরিহারাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে খাবার ও জল বিতরণ করেন। পাশাপাশি জল ও খাবার নিয়ে আন্দোলনকারী চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রান্ট । 

জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিষ হালদারকেও দেখা যায় এসএসসি ভবনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ।  রাত ২ বেজে ২০ মিনিট নাগাদ এক গাড়ি জল নিয়ে বিক্ষোভকারীদের মাঝে পৌঁছলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। সজল বলেন,  তালিকা প্রকাশ করলে অনেক তৃণমূল নেতার অবস্থা ছাল ছাড়ানো মুর্গির মত হয়ে যাবে। এসএসসি ভবনের সামনে থেকে করুনাময়ী ও উইপ্রো মোড়ের রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ ।  

Comments are closed.