ডিজিটাল ডেস্ক, ১৯ এপ্রিল: অনলাইনে টিকিট বা ঘর বুকিংয়ের সময় প্রতারণার ফাঁদে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রকের অধীন ভারতীয় সাইবার অপরাধ সমন্বয় কেন্দ্র (I4C) জনস্বার্থে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, অনলাইন বুকিংয়ের জগতে সক্রিয় রয়েছে একাধিক প্রতারক। একটু অসতর্ক হলেই ফেঁসে যেতে পারেন আপনি বা আপনার কাছের কেউ।
বিশেষ করে, যাঁরা তীর্থভ্রমণ বা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাঁদের টার্গেট করে এই প্রতারকরা। কারণ, এ ধরনের মানুষ অনলাইনে টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ের দিকে বেশি ঝোঁকেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে সাবধান থাকবেন? কীভাবে প্রতারণা এড়ানো যায়?—এই বিষয়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ধর্মীয় পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের নিশানা করে দেশজুড়ে একটি বড়সড় অনলাইন প্রতারণাচক্র গড়ে উঠেছে। প্রতারকরা ভুয়ো ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ার ফেক পেজ ও ভুয়ো ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। এমনকি গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনেও এই প্রতারণামূলক সাইটগুলোর বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপও ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হচ্ছে, তার উদাহরণও তুলে ধরেছে মন্ত্রক। চারটি ক্ষেত্রে অনলাইন বুকিং প্রতারণার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে:
১. কেদারনাথ চারধাম যাত্রার সময় হেলিকপ্টার বুকিং।
২. পুণ্যার্থীদের জন্য অতিথিশালা ও হোটেল বুকিং।
৩. ক্যাব বা ট্যাক্সি অনলাইন বুকিং।
৪. ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ কিংবা দীর্ঘ ছুটির ট্যুর প্যাকেজ বুকিং।
এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জনসাধারণকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে অনলাইন বুকিংয়ের সময়। কেন্দ্রের দেওয়া নির্দেশিকাগুলি হলো—
টাকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা ভালো করে যাচাই করুন।
গুগল, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে ‘Sponsored’ ট্যাগ থাকা লিঙ্কে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
শুধু সরকারি পোর্টাল বা পরিচিত, নির্ভরযোগ্য সংস্থার মাধ্যমেই অনলাইন বুকিং করুন। বুকিংয়ের পর সেটি সত্যি কি না, যাচাই করে নিন।
যদি কোনও ভুয়ো বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের খোঁজ পান, তাহলে দ্রুত ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল-এ গিয়ে বা ১৯৩০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানান।
কেদারনাথ যাত্রার জন্য হেলিকপ্টার বুকিং করা যাবে শুধুমাত্র এই সরকারি ওয়েবসাইটে: https://www.heliyatra.irctc.co.in।
সোমনাথ ট্রাস্টের অতিথিশালার বুকিং করতে হবে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://somnath.org থেকে।
এই নির্দেশিকা মেনে চললেই অনলাইন প্রতারণা থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।
প্রতারণা রুখতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গুগল, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে নিয়মিতভাবে প্রতারণার সঙ্কেত ও তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোথায় কোথায় সাইবার অপরাধ বেশি হচ্ছে—সেই ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, যতটা সম্ভব ভুয়ো ওয়েবসাইট ও প্রতারণামূলক পেজ চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আগামী মে মাস থেকেই শুরু হচ্ছে বহু প্রত্যাশিত চারধাম যাত্রা। কেদারনাথের দরজা খুলবে ২ মে। প্রতিবছরের মতো এবারও এই সময় থেকেই অনলাইনে হাজার হাজার পুণ্যার্থী টিকিট ও হোটেল বুকিং শুরু করবেন। তার আগেই এসেছে কেন্দ্রের এই গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা, যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন।
Comments are closed.