বামপন্থাকে চরম ভয়! তাই কি শাসকের রোষের মুখে যাদবপুর থেকে হার্ভার্ড? ট্রাম্পের হার্ভার্ড তরজায় মিল খুঁজছে যাদবপুরও

21

শাসকের রোষের মুখে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ‍্যালয়। যে ইউনিভার্সিটি থেকে মার্ক জুকারবার্গ তার ফেসবুক শুরু করেছিলেন, ৮ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের রাজনৈতিক ক‍্যারিয়র ভীত রেখেছিলেন, সেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্য়ালয় এখন শাসকের কোপে টাকা হারাচ্ছে, রাজনৈতিক চাপে ধুকছে।

মার্কিন মুলুকের এই ঘটনার সঙ্গে ঘরের মাটির কোনও ঘটনার মিল পাচ্ছেন কী? নিশ্চই পাচ্ছেন। এই তো ২০২৫ সালের ১৪ই মার্চের কথা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয় তাদের ইন্স্টিটিউট অফ এমিনেন্সের তকমা হারাল! কিন্তু কেন? সেই সরকারের রোষে। যখন এই ঘটনা ঘটছে তখন মাথায় রাখবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিন্তু সেই বাংলার বালুরঘাটের সুকান্ত মজুমদার। কারণ হিসেবে প্রশাসনের তরফে, আর এই প্রশাসন অবশ্য়ই কেন্দ্রীয় প্রশাসন, সুকান্ত মজুমদার রাজ্য়সভায় দাঁড়িয়ে জানান, যেহেতু যাদবপুর তাদের বার্ষিক বাজেট কমিয়েছে, সেই কারণেই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইউনিভার্সিটি অবশ্য় বলছে এমন কোনও কিছুই হয়নি। যা হয়েছে সবটাই রাজনীতির খেলা। মোদি দিদির সেটিংয়ের ফল!

এবার আসুন হার্ভাডে। ট্রাম্প ২.৩ মিলায়ান ডলার সরকারি অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে হার্ভাডে । তবে কেন? মার্কিন শিক্ষা দফতর বলছে বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ ইহুদী ছাত্রদের অধিকার রক্ষায় ব্য়র্থ। গাজার সমর্থনে হার্ভার্ডে যে সমাবেশ হয়েছিল সেখানে ইহুদী ছাত্রদের অধিকার রক্ষা করতে পারে নি হাভার্ড! মার্কিন শিক্ষা দফতরও হাভার্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ক্য়াম্পাসে ইহুদী ছাত্রদের প্রতি অন্য়ায়ের অভিযোগ তুলে তারাও চাপ বাড়াতে থাকে। যদিও আইনি পথে তার বিরোধীতা করে হার্ভার্ড।

ফিরুন দেশে। কলকাতর যাদবপুর। বিজেপি থেকে তৃণমূল, সবারই সমস্য়ার জায়গা এই বিশ্ববিদ্য়ালয়। বার বার দাঁত ফোটাতে গিয়ে ফোকলা হাসি হাসতে হয়েছে ডানপন্থী দলগুলোকে। শুধু তাই নয়, দাঁত ভেঙেওছে বার বার। অভয়া থেকে চাকরিচুরি, ক্য়াম্পাসে সিসিটিভি, হোক কলরব, সবেতেই ডানপন্থীদের বলে বলে গোল দিয়েছে যাদবপুর। ৫ই মার্চ। ব্রাত্য় বসুর গাড়ি এক ছাত্রকে পিষে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে যাদবপুরে। ঘটনার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্য়ালয়ে সরকারপন্থী প্রফেসারদের বৈঠকের বিরোধীতা নিয়ে। জল গড়ায় আদালতে। শুভেন্দু অধিকারি থেকে দিলীপ ঘোষ তো সাফ বলেই দিলেন যাদবপুর মাওবাদী ও দেশদ্রোহীদের আঁতুড়ঘর। বিজেপির অঘোষিত ছাত্র শাখা অভিবিপি তো বলেই বসল এবার তারা সার্জিকাল স্ট্রাইক করবে বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে তৃণমূল, তবে সবচেয়ে বেশী লম্ফঝম্প বিজেপির। ডানপন্থীদের ঐক্য়বধ্য় লড়াই যাদবপুরের বিরুদ্ধে। তারপর ১৪ মার্চ কেন্দ্র জানিয়ে দিল ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্সের তকমা গেল যাদবপুরের ।

এবার চলুন লিবার্টির দেশে। ট্রাম্পের রোষের কারণ ৭ই অক্টোবরের ২০২৪-এর একটি ঘটনা। গাজায় অশান্তির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ছাত্রদের একাংশ। গাজার নৃশংসতার জন্য় সরাসরি ইজরায়েলকে দায়ী করে তারা। এর পর থেকে বেঁকে বসে ইজরায়েল পন্থী মার্কিন হোমড়া চোমড়ারা। শুরু হয় রাজনৈতিক তর্জা। হার্ভার্ডকে দেশ বিরোধী কার্যকলাপের আঁতুড়ঘড় বলে শুরু হয় সোশাল মিডিয়া ক্য়াম্পেন। এর পর আসরে নামে মার্কিন হোমল্য়ান্ড সিকিউরিটি। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দ্বায়িত্ব থাকে মার্কিন হোমল্য়ান্ড সিকিউরিটি। তাদের বক্তব্য় বিশ্ববিদ্য়ালয়ে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের আনাগোনা হার্ভার্ডকে রাজনৈতিকভাবে প্রাভাবিত করছে। আন্তর্জাতিক ছাত্ররা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ক্য়াম্পাসে এনে দেশের নিরাপত্তায় সমস্য়া তৈরি করছে। তাই আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ওপর কড়া নজদরদারি শুরু করে মার্কিন প্রশাসন। এর পর আসে প্রশাসনিক হুমকি। প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভর্তি নেয় হার্ভার্ড। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের ভিসা না দেওয়ার হুমকি দেয়। তবে সেই হুমকি এখনও কার্যকর করা হয়নি।

মোটের ওপর ট্রাম্প চান না হার্ভার্ডের ক্য়াম্পাসে কোনওরকম বিরোধী রাজনৈতিক মনোভাব তৈরি হোক! বিশেষ করে বামপন্থা রাজনীতি গুটি পায়ে হার্ভার্ড হয়ে দেশে ছড়ালে তাতে সমস্য়ায় পড়বেন ঘোর পুঁজিবাদি এই দেশ! সেই কারনেই গাজা নিয়ে ইজরায়েলের বিরোধীতা করায় হার্ভাড যে ট্রাম্প নীতির উল্টো পথে হেঁটেছে তা বলার আর দরকার রাখে না। আগামী দিনে ক্য়াম্পাস রাজনীতিতেও যে ট্রাম্পের নজর থাকবে, এবং ট্রাম্পের লাইন না মানলে যে কপালে দুঃখ আছে সেটাই জোর ভাবে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিচ্ছে!

একই সমস্যা যাদবপুরেও। বামেদের গড় যাদবপুর কথাটা রাজনীতির ময়দানে প্রবাদবাক্য! এর নড়নচড়ন হয় নি। সেই বাম দুর্গ ভাঙতে যা যা করনীয় সবটাই করছে ডানপন্থীরা। কারণ সেই এক, ট্রাম্পের রোগ! বামপন্থাকে ভয় পেয়ে চিরশত্রু বানিয়ে তোলা। যাদবপুর, হার্ভার্ড, জেএনইউ- প্রতিবার সেই একই ছক। দেশ থেকে বিশ্ব সর্বত্র। তাতে যদি শিক্ষা লাটে ওঠে উঠুক! ভোট তো আর লাটে উঠবে না!

Comments are closed.