প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শোকস্তব্ধ বাংলা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গলা ধরে এল প্রবল প্রতিপক্ষেরও। চেয়েছিলেন বাংলার ছেলে মেয়েরা রাজ্যেই কাজ পাক। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শিল্পায়নের। বৃহস্পতিবার চলে গেলেন স্বপ্নের কাণ্ডারী। শোকস্তব্ধ বাংলার যুবসমাজ। এতদিন ছিন ২২ শে শ্রাবণ এবার যোগ হল ২৩ শে শ্রাবণও।
সকলে পড়বে, পড়ার শেষে সবার শেষে মিলবে কাজ। বাংলার যুব সমাজ স্বপ্ন দেখেছিল। শিল্পায়ন হলে কাজ হবে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। না তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। তাই হয়তো অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন দু-কামরার ফ্ল্যাটে। বৃহস্পতিবার সেই নিভৃতবাসেরও ইতি। চলে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
পরনের সাদা পাঞ্জাবী, সাদা ধুতি মতই একবিংশ শতাব্দীর বাংলার রাজনীতিতে শ্বেতশুভ্র রইলেন বুদ্ধদেব। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তাল হয়েছিল বাংলা। যার প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জীবন-যাপন হয়ে রইল দৃষ্টান্ত।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বিমান বসু। রাজনীতি শুরু প্রায় একই সময়ে, একের পর একে আন্দোলন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। একজন পরে চলে যান প্রশাসনে, আর আরেক জন আজও লড়ে যাচ্ছেন দলের সংগঠন সাজাতে। বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
১ মার্চ, ১৯৪৪ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর জন্ম হয় উত্তর কলকাতায়। তিনি ছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর ভাইপো।
১৯৬১ সালে কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন বুদ্ধদেব। স্কুলজীবনেই যোগ দেন NCC-তে। কলেজ জীবনে ছিলেন নৌ শাখার NCC ক্যাডেট।
১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হন। কলেজ জীবনেই যোগ দেন বামপন্থী রাজনীতিতে।
১৯৭৭-১৯৮২ সালে জ্যোতি বসু সরকারের মন্ত্রিসভায় সামলেছেন তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের দায়িত্ব।
১৯৮৭-১৯৯৬ সালে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী। সামলেছেন স্বরাষ্ট্র ও তথ্য প্রযুক্তি দফতরের দায়িত্ব।
১৯৯৯ সালে জ্যোতি বসু মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
৬ নভেম্বর, ২০০০ সালে প্রথমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।
১৮ মে, ২০০১ সালে ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
১৮ মে, ২০০৬ সালে চতুর্দশ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
১৯ মে, ২০১১ সালে পঞ্চদশ বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়।
একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে সংস্কৃতি। ৭৭ সাল থেকে সামলেছেন তথ্য সংস্কৃতি দফতর। তাঁর হাত ধরেই গড়ে উঠেছে নন্দন। শুরু হয়েছে কলকাতা বই মেলা। তারই উদ্যোগে কলাকাতায় ডানা মেলেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবও। বাংলার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য কখনই মলিন হবে না আশাবাদী ছিলেন বুদ্ধদেব।
বাংলার যুবসমাজ স্বপ্ন দেখেছিল কর্মসংস্থানের, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই স্বপ্ন আজ অনেকটাই ফিকে। অগাস্টের পর থেকে নেই হয়ে গেলেন স্বপ্নের দিশারি। মূহ্যমান বংলার যুবসমাজ।