আগুন ঝরছে বাংলাদেশে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পথে পড়ুয়ারা। দফায় দফায় পুলিশ এবং ছাত্র লীগের নেতা-নেত্রীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত পড়শি দেশ। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বিরোধিতায় ছাত্র আন্দোলনের জেরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশে। ১৯৭২ থেকে ২০২৪। বাংলাদেশে সংরক্ষণের চিত্রটা বদলে গিয়েছে। কী সেই পরিবর্তিত চিত্র।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ শুরু ১৯৭২ থেকে। তখন ছিল ৮০ শতাংশ সংরক্ষণ। ১৯৭৬ সালে বৃদ্ধি করা হয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ। বলা হয়, মোট নিয়োগের ৪০ শতাংশ হবে মেধার ভিত্তিতে। ১৯৮৫ সালে সংরক্ষণের আওতায় আসে ৫৫ শতাংশ। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ জনজাতি।
১৯৯৭ সালে সংরক্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০২ সালে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসনে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার ভিত্তিতে তাতে নিয়োগ হবে।
২০০৮ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসে এই নির্দেশ বাতিল করে বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসন পূর্ণ করা না গেলে তা খালি রাখা হবে।
২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের পাশাপাশি তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১২ সালে তার সঙ্গেই যুক্ত হয় এক শতাংশ প্রতিবন্ধী সংরক্ষণ।
যার অর্থ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত।
২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ।
এর পর সাতজন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামে ছাত্ররা।
হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।