রত্নভান্ডারের প্রহরী বিষধর সাপেরা! দীর্ঘ ৪৬ বছর পর দ্বাদশ শতকের জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডারের দরজা খোলা হল। কী আছে রত্নভান্ডারে?
দ্বাদশ শতকের জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডার নিয়ে নানা রকম কাহিনি চালু আছে। কথিত আছে, ভান্ডারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জগন্নাথ মন্দিরের বিপুল ধনরাশির পাহারায় থাকে সাপেরা! যদিও সেই সব দাবির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সংরক্ষণের কাজের জন্য দীর্ঘ আলোচনা এবং বিতর্ক পেরিয়ে সেই ভান্ডার রবিবার খোলা হল ৪৬ বছর পরে। ঠিক দুপুর ১টা বেজে ২৮ মিনিটে। ‘পবিত্র মুহূর্তে’ খোলা হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডারের দরজা। দ্বাদশ শতকের পুরনো মন্দিরের ‘বিবিধ রতন’ জমা আছে বলে বিশ্বাস।
রবিবার রত্নভান্ডারটির দরজা খোলার পরে তার ভিতরে প্রবেশ করবেন ১১ সদস্যের একটি দল। এর মধ্যে রয়েছেন রত্নভান্ডার নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির সভাপতি বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ এবং কমিটির সদস্য তথা জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাধি, পুরীর মহারাজা গজপতির একজন প্রতিনিধি এবং কমিটির বিশিষ্ট সদস্য সিবিকে মোহান্তি। এ ছাড়াও সাপেদের এড়াতে মন্দিরের ভিতরে এবং বাইরে উপস্থিত রয়েছেন স্নেক হেল্পলাইনের দু’টি বিশেষজ্ঞ দল। রত্নভাণ্ডারের দু’টি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। একটি বাইরের প্রকোষ্ঠ অন্যটি ভিতরের। রবিবার দুপুর পর্যন্ত বাইরের প্রকোষ্ঠ থেকে কিছু গহনা সম্বলিত বাক্স বার করে আনা হয়েছে মন্দিরে।
রবিবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডারের বাইরের প্রকোষ্ঠের দরজা খোলা হয় । কিন্তু ভিতরের রত্নকক্ষটি খুলতে অনেকখানি সময় লেগে যায়। মন্দির সূত্রে খবর, ভিতরের রত্নকক্ষের একটি তালা না খোলায় তালা ভেঙেই ভিতরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতেই ঝাঁক ঝাঁক বাদুড় বেরিয়ে আসে ভিতর থেকে। এর পরেই স্নেক হেল্পলাইনের তরফে মন্দিরে হাজির সর্প বিশেষজ্ঞদের দল। তাঁরা ভিতরে গিয়ে পরীক্ষা করে রত্নকক্ষটি নিরাপদ। তার পরেই ভিতরের রত্নকক্ষে প্রবেশ করে ১১ জনের কমিটি। শেষ পর্যন্ত ভিতরের কক্ষের কাজ বিশেষ এগোয়নি।
হাতে সময় না থাকায় মন্দিরের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাধি অন্য একটি দিন স্থির করেন ভিতরের কক্ষে প্রবেশ করার জন্য।
‘ওড়িশা রিভিউ’ নামে একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ওড়িশার রাজা অনঙ্গভীম দেব জগন্নাথদেবের অলঙ্কার তৈরির জন্য প্রায় দেড় হাজার কেজি সোনা দিয়েছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষকে। সেই সোনা রত্নভান্ডারেই থাকার কথা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বাইরের প্রকোষ্ঠেই রয়েছে জগন্নাথের একটি সোনার মুকুট এবং তিনটি সোনার হরিদকণ্ঠী মালা। জগন্নাথদেব এবং বলভদ্রের সোনার শ্রীভুজ বা হাত এবং শ্রীপয়ার বা পা-ও রয়েছে রত্নভান্ডারে। এছাড়াও ভিতরের রত্নকক্ষে আছে ৭৪টি সোনার গহনা। প্রত্যেকটির ওজন কম পক্ষে ১ কেজি করে। রয়েছে সোনা, হিরে, প্রবাল, মুক্তো দিয়ে তৈরি ‘প্লেট’। ১৪০টি ভারী রূপার গহনাও রয়েছে মন্দিরের ভিতরের রত্নকক্ষে।