আজ সেই বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল! টি২০ বিশ্বকাপের সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে ভারত। বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে শেষ টি২০ বিশ্বকাপে ভারত জয় পেয়েছিল ১৭ বছর আগে। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে সেটাই ছিল ভারতের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জয়। তারপর আর হয়নি। মাঝে বিরাট এবং রোহিতের নেতৃত্বে ভারতীয় দল ফাইনাল খেললেও সাফল্য আসেনি। শনিবার ভারতীয় দল নামছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। বার্বাডোজে খেতাব জয়ে মরিয়া থাকবে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাও। শুধু ফাইনাল বলে নয়, এই প্রথমবার প্রোটিয়ারা কোনও আইসিসি ট্রফির ফাইনালে উঠেছে। তাই সাফল্যের খিদে তাঁদের কিছু কম নেই। ভারতের মতোই তারা একটি ম্যাচেও হারেনি। সব দিক থেকেই ভারতীয় দলকে পাল্লা দেওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। দল হিসাবে ভারত ভাল ফল করলেও এই বার সেইরকম ফর্মে নেই বিরাট। সেমিফাইনালে চাপের মুখে হতাশা জনক আউট হয়েছেন তরুণ শিবম ডুবে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে সেই সব চিন্তা করে ফাইনালের আগে দলে খানিক পরিবর্তন হলেও হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল যদি পরিবর্তন হয়, তা হলে তা কেমন হবে? কার উপরে বা প্রকোপ পড়তে পারে? শিকে ছিঁড়বে কার? ওপেনার হবেন যশস্বী? কেমন হতে পারে সম্ভাব্য একাদশ?
রোহিত শর্মা: ওপেনার হিসাবে রোহিত শর্মার জায়গা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। আইপিএলের খরা কাটিয়ে এই বিশ্বকাপে ফর্মে রয়েছেন রোহিত। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চাপের মুখেও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেছে। ভারত যে ম্যাচে নজরকাড়া ক্রিকেট খেলেছে, প্রায় সব ক’টিতেই রোহিত শুরুতে নেমে আগ্রাসী ইনিংস খেলেছেন। কোনও বোলারকে রেয়াত করছেন না। ফাইনালেও রোহিতের থেকে আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস আশায় ভারতবাসী।
যশস্বী জয়সওয়াল: ফাইনাল হলেও দলে এই পরিবর্তনটি করা উচিত। প্রথম ম্যাচই যদি হয় ফাইনাল, তা হলে যে কোনও ক্রিকেটারেরই চাপে পড়া স্বাভাবিক। তবে যশস্বীর অভিজ্ঞতা আছে। দলের সঙ্গে অনেক দিন ধরে রয়েছেন। ফাইনালে রোহিতের সঙ্গে ওপেন করলে ভাল জুটি হতে পারেন।
বিরাট কোহলি: ওপেনিংয়ে এতগুলি ম্যাচে নেমে কোহলি হতাশ করেছেন। সাত ম্যাচে মাত্র ৭৫ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কোহলি এমন সব শট খেলে আউট হয়েছেন, যা তাঁর ত্যহেকে কখনই কাম্য নয়। তাই তাঁকে তাঁর চেনা ৩ নম্বর জায়গা ফিরিয়ে দিলেই সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। অধিনায়ক রোহিতের অবশ্য দাবি ‘কোহলির সেরাটা জমে রয়েছে ফাইনালের জন্য’।
সূর্যকুমার যাদব: ওপেনার হিসাবে বিরাট ব্যর্থ হলেও হলেও সূর্যকুমার মান রেখেছেন। সেমিফাইনালে সূর্যকুমার রোহিতের জুটি জয়ের অন্যতম বড় কারণ। ৩৬ বলে তাঁর ৪৭ রান সে দিক থেকে মূল্যবান। ফাইনালেও সূর্যকে সামাল দিতে হতে পারে। যদি ওপেনারেরা আবার ব্যর্থ হন, তা হলে হাল ধরতে হবে সূর্যকেই। এমনিতেও টি২০ জন্য উপযুক্ত ব্যাটসম্যান বলে একটা সুনাম রয়েছে তাঁর।
ঋষভ পন্থ: দলের প্রয়োজনে এত দিন বিরাটের জায়গায় পন্থ তিনে নামছিলেন। মোটের উপর ভালোই খেলেছে গোটা টুর্নামেন্টে। তবে ফাইনালে দলের প্রয়োজনে পন্থকে পাঁচে নামতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। হঠাৎ করে আগ্রাসী ক্রিকেট খেললে চলবে না। দলের প্রয়োজনে ধীরস্থির ইনিংসও খেলতে হতে পারে। আবার শেষের দিকে নামলে প্রথম থেকেই আগ্রাসী ভূমিকা নিতে হতে পারে।
হার্দিক পাণ্ডিয়া: ব্যাট হাতে হার্দিকের অবদান প্রায় প্রতি ম্যাচেই দেখা গিয়েছে। সেমিফাইনালেও জর্ডানের ওভারে পর পর দুটি ৬ না মারলে ১৭০ রানে ইন্ডিয়া পৌঁছতে পারত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। মাঝের দিকে নেমেও দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেছেন। বল হাতেও খুব একটা খারাপ নয়। শনিবারও বোলার হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হতে পারে।
রবীন্দ্র জাডেজা: যে কোনও ফরম্যাটেই ভারতের ভাল বিকল্প। তবে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খুব একটা ভাল যায়নি জাডেজার কাছে। না বল, না ব্যাট— কোনও ভাবেই খুব একটা বড় প্রভাব নেই। তবে শেষের দিকে নেমে ব্যাট হাতে দু একটা বড় শট পাওয়া গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। ফাইনাল বড় ম্যাচ। জাডেজার ব্যাটিং বা বোলিং থেকে এই ম্যাচে দায়িত্বশীল অবদানের আশা রাখছে দল।এমনিতেও দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জাডেজা অন্যতম। তাই স্নায়ুর লড়াইয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলার ক্ষমতা রাখেন। যা খুবই প্রয়োজনীয়।
অক্ষর পটেল: লোয়ার অর্ডারে ভারতের সবচেয়ে ভাল বিকল্প। এ বারের প্রতিযোগিতায় শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে রয়েছেন। হাতে কয়েকটা বল পেলেই চালিয়ে খেলেন। সেমিফাইনালে শেষ মুহুর্তে নেমেও ছয় মেরেছেন। সেটাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের পিচে বাড়তি সুবিধাও পাচ্ছেন অক্ষর।
যশপ্রীত বুমরা: তাঁর জায়গা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পর থেকে বুমরা পিছনে ঘুরে তাকানোর মতো কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছেন না। একের পর এক ম্যাচে ভাল বল করছেন। ডেথ ওভার এবং জুটি ভাঙার ক্ষেত্রে বুমরার অবদান অনস্বীকার্য। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রাভিস হেডের উইকেট তিনিই তুলে নিয়েছিলেন।
কুলদীপ যাদব: সেমিফাইনালে একার হাতে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ‘চায়নাম্যান’ বোলিং ভারতকে প্রভূত সাহায্য করছে। বার্বাডোজের পিচেও কুলদীপের ভাল বোলিং দেখার অপেক্ষায় দল।
আরশদীপ সিংহ: প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছেন। ফাইনালে তিনটি উইকেট পেলেই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যাবেন। এটাই ভাল খেলার অনুপ্রেরণা হতে পারে আরশদীপের কাছে। তবে ওয়াইড বল করে অতিরিক্ত রান দেওয়ার প্রবণতা কমানো প্রয়োজন। বিশেষ করে ফাইনাল যদি ‘লো স্কোরিং’ ম্যাচ হয় তবে সেই এক একটি রান আরৈ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।