প্রতিকূল আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে সীমান্তে ফের সক্রিয় চোরা পাচারকারী চক্র! বিএসএফের অভিযানে উদ্ধার ৫০০ গরু, ৬৫০ কেজি গাঁজা
ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানায় প্রহরায় থাকেন বিএসএফ জওয়ানেরা। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে তাদের সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু আবহাওয়াই নয় আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের কড়া নজরদারির ফলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গরু পাচার আটকানোর ক্ষেত্রেও সাফল্য এসেছে। বিএসএফের গোপালপুর সেক্টরের অধীনে থাকা ১৫৭ নাম্বার ব্যাটালিয়ান ভারত বাংলাদেশ সীমানায় সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে মোতায়েন রয়েছে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ৫ ৫০ কিলোমিটার এলাকা কোচবিহার জেলার মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে ৫০ কিলোমিটার এর মতন এলাকায় খোলা সীমান্ত রয়েছে। বিএসএফ সূত্রে খবর, বর্ষাকালের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দিকের চোরাকারবারিরা গরু, ফেনসিডিল, গাজা ইত্যাদি পাচারের ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত রক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকেন। বিএসএফ জওয়ানরা চোরা চালানে বাধা দিলে পাচারকারীরা বিএসএফের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। জানুয়ারি ২০২৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে প্রহরারত ১৫৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা মোট ৫০০টি গরু উদ্ধার করেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে ৩৫ হাজার বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছে। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি টাকা। গাজা ৬৫০ কেজি উদ্ধার করেছে যার বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে চোরা চালানোর সঙ্গে যুক্ত ১২ জন ভারতীয় চোরাকারবারি এবং ৬ জন বাংলাদেশি চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করে বিএসএফ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ জবান পি রামা সাহেব বলেন, ‘সীমান্তে কাঁটাতার থাকলেও অনেক সময় আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা সক্রিয় ওঠে। সীমান্তের নিরাপত্তার স্বার্থে তখন আরও সতর্ক হয়ে ডিউটি করতে হয়। বর্ষার সময় সমস্যা হলেও আমাদের যে ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাতে সমস্যাগুলো আমাদের কাছে আর সমস্যা বলে মনে হয় না।’ বিএসএফের মহিলা কনস্টেবল সিমরান সাগর বলেন, ‘ডিউটি করার সময় আমাদের চোরাকারবারিদের কোন গতিবিধি নজরে এলে সাথে সাথে আমরা কোম্পানি হেডকোয়ার্টারে জানিয়ে দেই। চোরাকারবারিদের পাচারে বাধা দিলে ওরা দলগতভাবে আমাদের ঘিরে ধরে আমাদের উপর হামলা করে। তখন আত্মরক্ষার্থে আমাদের পিএনজি বন্দুক দিয়ে গুলি চালাতে হয়।’ বিএসএফের ডেপুটি কমান্ডেন্ট অমিত কুমার বলেন, ‘সীমান্তে কর্তব্যরত জওয়ানরা আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ডিউটি করছে। তাছাড়া সীমান্তের দুই ধারের ছোট ছোট ঝোপঝাড় সীমান্ত চোরা চালানের ক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে। সীমান্ত ঘরবাড়ি এইসব কাজে চোরাকারবারিদের আরও সুযোগ করে দেয়। তাই এই ধরনের সীমান্তে ডিউটি করার সময় নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন জওয়ানদের হতে হয়। চোরাচালান বন্ধ করতে কখনো পিএনজি বন্দুক ব্যবহার করতে হয়, আবার কখনো চিলি গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড এইসব ব্যবহার করতে হয়। কারণ বাংলাদেশের সাথে আমাদের দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পাচারকারীরা দুই দিক থেকে কর্তব্যরত জওয়ানদের ঘেরাও করে তাদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালালে আত্মরক্ষার্থে আমাদের জওয়ানরা তখনই গুলি চালাতে বাধ্য হন। এটা অবশ্য কোমরের নিচে গুলি চালানো হয়। যাতে চোরা চালানকারীদের ক্ষতি বেশি না হয়।’