Narendra Modi: বিজয় ভাষণে উধাও ‘আব কি বার চারশো পার’ স্লোগান ‘ঈশ্বর নির্বাচিত’ মোদীর ভরসা এখন মিলিজুলি সরকার

0 31

৩৪ মিনিটের ভাষণে জোর এনডিএ জোটের উপর, গড়তে হবে ‘এনডিএ’ সরকার, দেশকে নতুন দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার মোদীর। মঙ্গলবার ১৮তম লোকসভা ভোটের ফলাফল সামনে আসতে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। জোট হিসাবে এনডিএ ম্যাজিক ফিগারের গন্ডি পার করতে পারলেও দশ বছর পরে একক ভাবে সেই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ বিজেপি।

এই বারে ভোটে প্রথম থেকেই ‘আপ কি বার চারশো পারে’র স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছিল মোদী-শাহ জুটি। কথা ছিল এনডিএ জুটি পার করবে ৪০০ আসনের গন্ডি। আর বিজেপি একক রাজনৈতিক দল হিসাবে ছাড়াবে ৩০০ আসনের মাত্রা। শনিবার সপ্তম দফার ভোট শেষেও বুথ ফেরত সমীক্ষায় বেশ স্বস্তি জনক ফলের আভাস দিয়েছিল নানা সংস্থা। ৪০০ পার না হলেও যে আভাস মিলেছিল তাতে কম বেশি ৩৫০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার কথা ছিল এনডিএ জোটের। আর বিজেপির কথা ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের। কিন্তু মঙ্গলবার যতই বেলা বেড়েছে ততই বদলেছে অঙ্ক। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো দূরে থাক এক সময়ে এনডিএ জোটের থেকে এগিয়ে গিয়েছিল বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। পরে অবশ্য আবার এগিয়ে যায় এনডিএ। রাত অবধি গণনার শেষে এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯২ আসন। আর বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট পেয়েছে ২৩৪ আসন।

একক দল হিসাবে বিজেপির প্রাপ্তি ২৪০ আসন। এখন সরকার গড়তে মোদী-শাহকে ভরসা করতে হবে জোটের বাকি দলগুলির উপরে। তবে আসল বাজি এনডিএ জোটের দুই শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং নীতিশ কুমারের উপর। দ্বিতীয় জন এখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, আর প্রথম জন বিজেপির এঙ্গে জোট করে অন্ধপ্রদেশে লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা ভোটেও জয়লাভ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সরকার গড়বেন তিনি। এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরেই বিজেপিকে ‘ল্যাংড়া’ বলেও কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ।

তবে মঙ্গলবার এনডিএ জোটের জয়ের পরে সন্ধে ৮ টা নাগাদ দিল্লির দীন দয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এই দিন রাত ৯টার কিছুর আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্যে এনডিএ জয়ের কথা থাকলেও খানিকটা অনুপস্থিত ছিল ‘মোদী সরকার’ নাম। একবারই শোনা গেল ‘মোদীর গ্যারান্টি’র কথা। শোনা গেল না ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। বরং তার জায়গায় উঠে বারবার এল ‘এনডিএ’ জোট এবং তার শরিকদের অবদানের কথা। ধন্যবাদ জানালেন দেশের আপামর জনগণকেও।

এই দিন মোদী বলেন, ‘১৯৬২ সালের পর এই প্রথম কোনও জোট টানা তিন বার সরকার গড়তে চলেছে। তৃতীয় বার এনডিএ যে আশীর্বাদ পেয়েছে, তার সামনে আমি মাথা নত করছি। এনডিএ সরকার একের পর এক প্রকল্প চালু করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র থেকে বাইরে নিয়ে এসেছি। তবে যত ক্ষণ না পর্যন্ত দারিদ্র দেশে অতীত হয়ে যাচ্ছে, তত ক্ষণ আমরা থামব না। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ বানানোর জন্য এনডিএ সরকার নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’

মোদীর বক্তব্যে উঠে এসেছে এনডিএ সরকার তৈরির জন্য নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর প্রয়োজনীয়তাও। সেই সঙ্গেই মনে করিয়ে দিয়েছেন এনডিএ জোটের কথাও। বিজেপির দিকে সাফল্যের ঝোল না টেনে তিনি বলেন, ‘অন্ধপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডুর নেতৃত্বে এনডিএ জোট ভাল ফল করেছে। বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছে। বিহারেও নীতীশবাবুর নেতৃত্বে এনডিএ জোট ভাল ফল করেছে।’          

পাশাপাশি বিরোধী জোটকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা একজোট হয়েও বিজেপির থেকে বেশি আসন জিততে পারেনি। চার রাজ্যের বিধানসভায় মনে হয় কংগ্রেসের জামানত জব্দ হয়েছে।’

সেই সঙ্গেই আগামীদিনের জন্য বার্তা দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বর অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তুলব আমরা। আপনারা ১০ ঘন্টা কাজ করলে মোদী ১৮ ঘন্টা কাজ করবে। তৃতীয় দফায় দেশে বড় সিদ্ধান্তের নতুন ইতিহাস লেখা হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় নিজেকে ‘মানুষের সেবায়েত’ বলেছিলেন মোদী। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি ‘দেশের চৌকিদার’। এবং এই বারে রামমন্দির উদ্বোধনের সময় থেকে ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘তাঁকে ঈশ্বর নির্বাচন করেছেন, মানুষের কাজের জন্য।’ যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কটাক্ষ করেছেন অনেকেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.