Loksabha Election 2024: সেয়ানে সেয়ানে টক্কর, ভোট যুদ্ধে দুই ফুল, কী বলছে আরামবাগের ভোট সমীকরণ
আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র। এক সময়ের বামেদের সেই সব দুর্ভেদ্য দূর্গগুলির মধ্যে একটি যেখানে ভরা তৃণমূলের শাসন কালে রাজ্যে পালা বদলেও পরে ঘাস ফুল ফোটাতে রীতিমতন বেগ পেতে হয়েছে তৃণমূলকে। সেই ১৯৬৭ থেকে শুরু ২০১৪ অবধি এই আসনে বজায় ছিল বাম শাসন। মাঝে খালি ৩ বছর ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল এই আসনে সাংসদ ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জনতা পার্টির প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র থেকে নিয়মিত সাংসদ ছিলেন বামেদের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ অনিল বিশ্বাস। একা তিনিই সাংসদ হয়েছিলেন ৭ বার। ১৯৮৪ থেকে ২০০৯ এই আসন থেকে জিতে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। পরে ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের সময় এই আসন তফসিলিদের জন্য সংরক্ষণ করা হলে আর প্রার্থী হতে পারেননি অনিল। ২০০৯ সালে এই আসনে জয় পায় সিপিএমের শক্তিমোহন মালিক। তখনও ব্যবধান ছিল ২ লাখের বেশি। তবে পালাবদল হয় ২০১৪ সালে। তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার ঘাসফুল ফোটাতে সক্ষম হয় আরামবাগে। প্রায় পৌনে চার লাখের বেশি ভোটে জয় পান তিনি। তখন দ্বিতীয় বামেরা এবং তৃতীয় বিজেপি।
তবে সব অঙ্ক ঘেঁটে দিয়ে অনান্য কেন্দ্রের মতই এই কেন্দ্রেও ২০১৯ সালে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী হিসাবে উঠে আসে বিজেপি। এমনকি আসনটিও প্রায় জিতেই নিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তপন কুমার রায়। কিন্তু শেষ বেলায় মান বাঁচে শাসক দলের। মাত্র ১,১৪২ ভোটে কানঘেঁষে জয় পান অপরূপা। তৃণমূলের ঝুলিতে আসে ৪৪.৭৮% ভোট এবং বিজেপি পায় ৪৪.৭০% ভোট। তফাত কেবল ০.৮% ভোটের।
তখনই যেন ঠিক ছিল পরেরবার আর টিকিট পাচ্ছেন না অপরূপা পোদ্দার। বরং তাঁর বদলে জেলা পরিষদের সদস্য মিতালি বাগকে টিকিট দিয়েছে মমতা। যদিও টিকিট পাওয়ার আগে তাঁর পরিচিতি খুব একটা ছিল না। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সাধারণ জীবন যাপন এবং দলের প্রতি এক নিষ্ঠ হিসাবে একটা সুনাম রয়েছে মিতালির।
অন্যদিকে বিজেপিও বদলেছে তাঁদের প্রার্থী। পদ্ম প্রতীকে লড়াই করছেন অরূপকান্তি দিগড়। গত বারে একটুর জন্য হারানো আসন এই বার জিততে প্রথম থেকেই মরিয়া বিজেপি। রাজ্য স্তরে তো বটেই এখানে এসে প্রথম প্রচার সভা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে আরও এক দফা সভা করে গিয়েছেন তিনি। রোড শো করেছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আবার শেষ বেলায় আরামবাগে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই আসনে জোট সমর্থিত বাম প্রার্থী বিপ্লবকুমার মিত্র। বাম পরিবারে বেড়ে ওঠা বিপ্লবের বাবা বংশীবদন মিত্র এক সময়ে এই লোকসভার অন্তর্গত খানাকুল বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন। যদিও ২০১৯ লোকসভার ভোট তাঁদের জন্য খুব একটা আশাজনক নয়। গত লোকসভায় বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে ২৩% ধ্বস নামে। পকেটে আসে মাত্র ৬.৯২% ভোট। এবং কংগ্রেসের প্রার্থী পেয়েছিলেন ১.৭৩% ভোট। দুই মেলালে মোট সম্বল ৮.৬৫% ভোট।
তবে লড়াই খুব একটা সহজ নয় সেটা জানে সব পক্ষই। যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের দিকে তাকালে খানিকটা স্বস্তিতে পদ্ম শিবির। কারণ ৭টি বিধানসভার চারটিতে জয় পায় বিজেপি এবং ৩টিতে জয় পায় তৃণমূল। তবে এই অঙ্ক যে লোকসভা ভোটে নাও মিলতে পারে তা বিলক্ষণ জানে দুই পক্ষ। তাই জয় নিয়ে আশাবাদী হলেও কাজে এতটুকু ঢিল দিতে নারাজ দুই ফুলের দুই প্রার্থীই।